বছর শেষের মন খারাপ করা সন্ধ্যায় শীতের কুয়াশা মাখা বাতাসে উড়িয়ে দেননি সে চিঠি।
একুশ শেষ। বর্ষবিদায় আর নতুন বছরে আবাহন নানা জনে নানা ভাবে করেন। অভিনেত্রী থেকে রাজনীতিক হওয়া রূপা চিঠি লিখলেন। তাও আবার ৫০ পয়সার পোস্টকার্ডে। বছর শেষের মন খারাপ করা সন্ধ্যায় শীতের কুয়াশা মাখা বাতাসে উড়িয়ে দেননি সে চিঠি। পোস্ট অফিসের বাক্সে গলিয়েও দেননি। তবে পোস্ট করেছেন। পোস্ট করেছেন এ যুগের ডাকহরকরা ফেসবুকের দেওয়ালে। প্রতি— ভারতমাতা। ঠিকানা— ভারতবর্ষ।
তিনি রাজ্যসভার সাংসদ। তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির মহিলা মোর্চার প্রাক্তন রাজ্য সভানেত্রী। তবে তার অনেক আগে অভিনেত্রী রূপাকে চিনেছে বাংলা। বি আর চোপড়ার মহাভারত গোটা দেশের ঘরে ঘরে দ্রৌপদী হিসেবে পৌঁছে দিয়েছিল রূপাকে। সে সব দিন আর নেই। কিন্তু রূপা এখনও খবরে থাকেন। সব সময় বিরোধী নেত্রী হিসেবে নয়, দলের বিদ্রোহী রূপেও। তবে বছর শেষে রূপা সামনে এলেন এক চিঠি লিখে।
ভারতমায়ের উদ্দেশে পাঠানো চিঠিতে লিখলেন, 'মা, এই ক’টা বছর বড় ঝামেলায় কাটল সকলের। সবাইকে বিপদমুক্ত কর। নতুন বছর যেন সবার ভাল কাটে। একটু দেখো প্লিজ। মা— আমার প্রণাম নিও। তোমার স্নেহের রূপা।' ভারতমাতার স্নেহের রূপা এটুকু লিখেই শেষ করেননি ছোট্ট চিঠি। আবার 'পুনশ্চ' বলে লিখেছেন, 'ও! ভুলেই গেছি বলতে, আজ ৩১ ডিসেম্বর আয়করের টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। নিশ্চিন্ত।' চিঠির তারিখ, শেষ দিন, ২০২১।
ফেসবুকে রূপা কিছু লিখলেই তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সে আলোচনা বেশি হয় তাঁর রাজনৈতিক শিবিরেই। গেরুয়া শিবিরের নেতাদের ঘুম ছুটে যায়— আবার কোনও বোম ফাটল না কি! কখনও কখনও মর্মোদ্ধার করাও মুশকিল হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতেও তো কী সব লিখেছেন। মানে বুঝতে না পেরে আর কেউ ঘাঁটাতে যাননি। লিখেছেন, 'আমি ঈশ্বরের নামে... a long pause.. and then ঘোষণা শপথ রইল পরে আড়ালে।'
অর্থ বুঝতে না পারার মুশকিলও কি কম নাকি। উদ্বেগ সামলাতে না পারা প্রিয়জনেরা মাঝরাতে ঘুম থেকে তুলেছেন রূপাকে। ফোন ধরা নিয়ে অনীহায় থাকা রূপা বাধ্য হয়েছেন উদ্বেগ কাটাতে। বোঝাতে হয়েছে, মনের খেয়ালে লেখার মধ্যে কোনও গোপন বা ভয়ঙ্কর ইচ্ছার বার্তা নেই। তবে শুক্রবার লেখা পোস্টকার্ডের চিঠি যে ভেবে চিন্তে গুছিয়ে লেখা তা মানছেন নরেন্দ্র মোদীর ভক্ত রূপা। বললেন, ‘‘ভারতীয় ডাক বিভাগকে যে ভাবে মোদীজি নতুন চেহারা দিয়েছেন তাতে আমি খুব খুশি। তাই বছরের এই দিনটায় পোস্টকার্ডকে বেছেছি লেখার জন্য। ফেসবুকের দেওয়ালে না লিখে পোস্ট করেছি পোস্টকার্ড। চাই, আবার ফিরে আসুক সেই পুরনো দিন। বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে গুরুজন, প্রিয়জনদের পাঠানো হোক পোস্টকার্ডে এক টুকরো বার্তা। তাতে ডাক বিভাগ বাঁচবে, আবার চিঠির সংস্কৃতিও বাঁচবে।’’ কিন্তু সেখানে আবার আয়করের কথা কেন? রূপা বললেন, ‘‘এটাও সামাজিক বার্তা। সকলকে কর্তব্য মনে করিয়ে দেওয়া। আমি আগেই অগ্রিম কর মিটিয়ে দিয়েছিলাম। আজ নিয়ম মেনে রিটার্ন জমা করেছি।’’
এ সব তো হল। তবে ১৪০ কোটির দেশে শুধু 'ভারতবর্ষ' ঠিকানা লেখা থাকলে ডাক বিভাগ ভারতমাতার দরজায় পৌঁছে দিতে পারবে তো পোস্টকার্ড! ঠিক পারবে বলে দাবি রূপার। মনে করালেন তাঁর যৌবনের কথা। সেই সময়ে ভক্তদের চিঠি আসত গাদাগাদা। ঠিকানায় লেখা থাকত রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা। তাতেই মিলে যেত। কলকাতায় আর রূপাই যে ছিল না তেমন। তবে সে সব নীল ইনল্যান্ড লেটারের ঢাকাঢুকি দেওয়া চিঠি। এমন খোলামেলা পোস্টকার্ড নয়।