সোমবার বিজেপির আদি রাজ্য দফতরে দিলীপ ঘোষ। — নিজস্ব চিত্র।
সোমবার তাঁকে অনুরাগীদের দেওয়া মুকুট পরতে দেখা গেলেও দলের পক্ষে দায়িত্বের মুকুট নেই দিলীপ ঘোষের। একদা বিজেপির রাজ্য সভাপতি পরে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ এখন শুধুই দলীয় সাংসদ। কিন্তু অনেক দিন পরে কলকাতায় দলের আদি রাজ্য দফতরে দিলীপকে ঘিরে দেখা গেল উল্লাস। স্লোগান উঠল— ‘হাউ ইজ দ্য জোশ! দিলীপ ঘোষ, দিলীপ ঘোষ।’
জন্মলগ্ন থেকে রাজ্য বিজেপির এটাই রাজ্য দফতর হলেও এখন মুরলীধর সেন লেনে নয় দল পরিচালিত হয় সল্টলেকের নতুন অফিস থেকে। কোনও দফতরেই দিলীপের জন্য আলাদা করে ঘর নেই এখন। তবে দিলীপ যে বিজেপি কর্মীদের একাংশের মনে রয়েছেন সেটাই যেন পুরনো দফতরে ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে দেখিয়ে গেলেন দিলীপ।
রবিবার রাতেই বিজেপির কোর কমিটির বৈঠকে দলের পুরনো কর্মীদের কাজে ফেরানো নিয়ে দিলীপ দাবি তোলেন বলে গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা যায়। এটাও শোনা যায় যে কী ভাবে এই কাজ করতে হবে তার পরামর্শ দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ছোট ছোট এলাকা ধরে দলের বিজয়া সম্মেলন করে যে সব ‘আদি’ নেতা, কর্মীদের সঙ্গে দলের দূরত্ব তৈরি হয়েছে তাঁদের ডাকা হোক। এ বিষয়ে রাজ্য বিজেপি কোনও সিদ্ধান্ত না নিলেও দিলীপ সোমবার সকালেই জানিয়ে দেন মুরলীধর সেন লেনের দফতরে বিজয়া সম্মেলন করবেন তিনি।
কথা ছিল দিলীপ আসবেন বিকেল ৪টেয়। কিন্তু আসতে আসতে ৫টা বেজে যায়। আর তত ক্ষণে মুরলীধরের সরু রাস্তায় ভিড় জমে যায়। কলকাতার তো বটেই আশপাশের জেলা থেকেও অনেক কর্মী চলে আসেন। তাঁদের মধ্যে যুব মোর্চা, মহিলা মোর্চার পুরনো কর্মীরাও ছিলেন। ভিড়ে দেখা গিয়েছে সম্প্রতি তৈরি হওয়া ‘বিজেপি বাঁচাও কমিটি’-র নেতাদেরও। দিলীপ পৌঁছতেই যে ধরনের স্লোগান উঠতে শুরু করে তা শুনলে ক্ষমতাসীন রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অস্বস্তিরও হতে পারে। ‘জোশ’-এর সঙ্গে ‘ঘোষ’ মিলিয়ে স্লোগানের পাশাপাশি শোনা গেল, ‘হামারা মুখ্যমন্ত্রী ক্যায়সা হো! দিলীপ ঘোষ জ্যয়সা হো!’
বিজয়া সম্মেলনে কর্মীদের মাঝখানে দিলীপ ঘোষ। — নিজস্ব চিত্র।
দিলীপ রাজ্য দফতরে পা রাখার পরেও চলতে থাকে স্লোগান। কেউ ফুলের মালা পরিয়ে, কেউ মুকুট পরিয়ে বরণ করে নেন। আর দিলীপ সেই সব উৎসাহী কর্মীদের মাঝখানেই বসে পড়েন। নিজে হাতে সকলকে মিষ্টি বিতরণও করেন। পরে অবশ্য সাংবাদিক বৈঠকের জন্য নির্দিষ্ট মঞ্চে ওঠেন দিলীপ। সেখান থেকে রাজ্য সরকার তথা তৃণমূলকে আক্রমণ করেন। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে জবাব থেকে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতার প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন। তবে মূলটাই ছিল আদি কর্মীদের বার্তা দেওয়া। পুরনো ভঙ্গিতে দিলীপ বলেন, ‘‘দরকার হলে তৃণমূলকে কানের নীচে থাপ্পড় লাগান যাঁরা দুর্বল নন। শক্তিশালী না হলে আপনার আদর্শ, দর্শনের কোনও মূল্য নাই ভাই।’’ একই সঙ্গে বলেন, ‘‘এর আগে অমিত শাহজি ২২টি আসনের টার্গেট দিয়েছিলেন আপনারা ১৮ আসনে জিতিয়েছিলেন। এ বার ৩৫ আসনের টার্গেট দিয়েছে, ৩০ টা তো করতেই হবে।’’
বিভিন্ন সময়ে তাঁর মন্তব্য নিয়ে দলকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে অতীতে অনেকবার সতর্কও করেছেন। এমনকি সেটা প্রকাশ্যে চিঠি দিয়েও। তার পরেও গত শুক্রবারই দিলীপ বলেন, ‘‘আজ পার্টি হারতে হারতে হারাধন হয়ে গিয়েছে। পিঠ ঠেকে গিয়েছে পিঠে। পুরনোরা এগিয়ে আসুন। কাজ করুন। পার্টিকে জেতান।’’ তবে সোমবার দিলীপকে ঘিরে যে ভিড় ও স্লোগান তাতেও কি অস্বস্তিতে পরবেন রাজ্য নেতৃত্ব? দিলীপ অবশ্য সতর্ক ভাবেই জবাব দিয়েছেন। তাঁকে ঘিরে উল্লাস ও স্লোগান নিয়ে দিলীপ বলেন, ‘‘অনেক সময়ে মানুষ আবেগে অনেক কিছু বলে ফেলে। সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে বরং বর্তমান নেতৃত্বের দেখানো পথেই আমাদের সকলকে মিলে লড়তে হবে।’’ সেই লড়াইয়ে দিলীপের ভূমিকা কেমন হবে? অনুরাগীদের ‘জিন্দাবাদ’ ধ্বনির মধ্যেই দিলীপ বলেন, ‘‘দলের সব পুরনো নেতাকেই দায়িত্ব নিতে হবে। দায়িত্বও দেওয়াও হবে। আমাকে যেখানে যেতে বলা হবে যাব।’’ রাজ্য জুড়ে প্রচারে দিলীপকে পুরনো ভূমিকায় দেখা যাবে? দিলীপ বলেন, ‘‘রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরা ঘুরবেন। আমাকে বললে আমিও যাব। আর দল যদি এ বারেও আমাকে প্রার্থী করে তবে নিজের এলাকাতেও সময় দিতে হবে। তবে জয় কারও একার উদ্যোগে হয় না। সবাই মিলে লড়াই করতে হবে।’’