—ফাইল চিত্র।
ক্ষমতায় এলে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসকারীদের গুলি করে মারার হুমকি দেওয়ার জন্য শুধু বিরোধীদের কাছেই নয়, নিজের দলেও ধিক্কৃত হলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি অবশ্য এর পরেও তাঁর অবস্থানে অনড়।
দিলীপবাবু রবিবার বলেছিলেন, যারা সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করছে, তাদের অসম, কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশের মতো গুলি করে মারা উচিত। এ রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে তা-ই করা হবে। দিলীপবাবুর এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিলীপবাবুর নাম না করে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এক জন নেতা বলছেন, উত্তরপ্রদেশের মতো গুলি করে মারবেন। ছিঃ! মুখে আনতে ইচ্ছা হয় না। বাংলা এখনও গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ হয়ে যায়নি। কেউ কেউ চাইছেন, এখানেও গুলি চলুক। এখানে এ সব হবে না। কোনও ঘটনা ঘটলে আপনারা দায়ী থাকবেন।’’
বিজেপির ভিতর থেকেও দিলীপবাবুর ওই মন্তব্যের নিন্দা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এ দিন টুইট করেছেন, ‘‘এক জন দিলীপ ঘোষ যা বলেছেন, তার সঙ্গে দল হিসাবে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। দিলীপদার এই মন্তব্য অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন। উত্তরপ্রদেশ এবং অসমের বিজেপি সরকার কখনও কোনও কারণেই মানুষকে গুলি করার পন্থা নেয়নি। এটা ওঁর অলীক কল্পনা।’’ বাবুলের টুইটে লাইক দিয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত।
এই সূত্রে তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইট, ‘‘দিলীপ ঘোষ তাঁর দলের চরিত্র ঠিক ভাবেই তুলে ধরেছেন। কিন্তু তাঁর দলেরই সাংসদ প্রকাশ্যে ওই মন্তব্য খারিজ করায় সংশয় দেখা দিয়েছে, রাজ্য বিজেপিকে নেতৃত্ব দেওয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা তাঁর আদৌ আছে কি?’’
আরও পড়ুন: যার যেখানে শক্তি সেখানে সে লড়ুক, বললেন মমতা
সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘রাজ্য সরকার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে এফআইআর না করলে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে আদালতের মাধ্যমে এফআইআর করা হবে।’’ কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ সরকার গুলি চালানো আড়াল করতে চাইলেও দিলীপবাবুর কথা থেকে সত্য বেরিয়ে পড়েছে। ওঁদের এই সব মন্তব্য হিটলারের হলোকাস্টের কথা মনে পড়ায়।’’
দিলীপবাবুর ওই মন্তব্যে জাতীয় স্তরেও বিড়ম্বনায় পড়েছে বিজেপি। প্রশ্ন উঠেছে, উত্তরপ্রদেশ, অসম সরকারের ‘গোপন কথা’ই কি ‘ফাঁস’ করে দিলেন দিলীপবাবু? আসুর সাধারণ সম্পাদক লুরিণজ্যোতি গগৈ বলেন, ‘‘এই বর্বর মন্তব্য থেকেই হত্যাকারী সরকারের চরিত্রটা ফের বেরিয়ে এল।’’ আসু এবং এজেওয়াইসিপি-র দাবি, দিলীপবাবুর মন্তব্যের জন্য অসম বিজেপি এবং সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ শোনওয়ালকে রাজ্যবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
দিলীপবাবু অবশ্য নির্বিকার। এ দিন মেদিনীপুরে তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার দলের অবস্থান, সরকার যা করেছে, সেটাই বলেছি। পশ্চিমবঙ্গেও সুযোগ পেলে তা করব।’’