ফাইল চিত্র।
ভবানীপুর বিধানসভার উপনির্বাচনের প্রার্থী বুধবারেও ঘোষণা করতে পারল না বিজেপি। তবে ওই কেন্দ্রের লড়াইয়ের জন্য সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টন সেরে ফেলেছে তারা। দলের রাজ্য সহ সভাপতি তথা সাংসদ অর্জুন সিংহকে ভবানীপুরের উপনির্বাচনের পর্যবেক্ষক করা হয়েছে। ঘটনাচক্রে, এ দিনই ভোরে অর্জুনের বাড়ির দরজার সামনে বোমাবাজি হয়েছে। তাতে অবশ্য কেউ হতাহত হননি। অর্জুন তখন বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর বাড়ি ‘মজদুর ভবন’ থেকে জানানো হয়, তিনি ওই সময় দিল্লিতে ছিলেন বলে। পুলিশের দাবি, স্থানীয় দুষ্কৃতীদের দুই দলের গোলমালের জেরে ওই ঘটনা ঘটেছে। তবে রাজনীতির জল এই ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই ঘোলা হতে শুরু করেছে।
অর্জুনের বাড়ির দরজার সামনে বোমা পড়ার ঘটনায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘অর্জুন সিংহকে দেখলে কি তৃণমূলের নার্ভ ফেল করে যায়? কাল ভোররাত থেকে তাঁর বাড়িতে বোমা মারা শুরু হয়ে গিয়েছে। কেন? যাতে উনি ভবানীপুরে না যান, সে জন্য? আমরা তৃণমূলের ভয়টা বুঝতে পেরেছি। ওযুধটাও ঠিকই দিয়েছি।’’ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী টুইট করেন, ‘‘আমরা অভিযোগ করি, দুষ্কৃতীরা রাজ্য প্রশাসনের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছে যে, দুষ্কর্ম করলেও তারা শাস্তি থেকে ছাড় পাবে। অর্জুন সিংহের বাড়িতে বোমাবাজির ঘটনায় সেই অভিযোগই সত্য প্রমাণিত হল। অর্জুন সিংহ অবশ্য ইস্পাত-কঠিন। তাঁকে ভয় দেখানো যাবে না।’’
পুলিশের অবশ্য দাবি, ভাটপাড়ায় সাংসদের কার্যালয় তথা বাড়ি `মজদুর ভবন` থেকেই এ দিন ভোরে গোলমালের সূত্রপাত। যদিও সাংসদের অভিযোগ পাওয়ার পরে দুই যুবককে আটক করেছে জগদ্দল থানার পুলিশ। তদন্তকারীদের বক্তব্য, ‘মজদুর ভবন’ থেকে বেরিয়ে কয়েক জন এ দিন ভোর ৬টা নাগাদ স্থানীয় ১৮ নম্বর গলির বাসিন্দা ১৩ বছরের দু্ই কিশোরকে মারধর করেন। তাদের আছাড় মারা হয়। সেই সংক্রান্ত সিসি ক্যামেরার একটি ফুটেজও এ দিন প্রকাশ করেছে পুলিশ। এর পিছনে দুষ্কৃতীদের দুটি দলের গোলমাল কাজ করেছে বলেই প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি। জগদ্দল থানা জানায়, ওই দুই কিশোর ১৮ নম্বর গলির এমন কয়েক জনের সঙ্গে মেলামেশা করে, যাঁরা সাংসদের অনুগামীদের বিরোধী। মার খাওয়ার পরেই পাল্টা হিসেবে ওই বোমা ছোড়া হয়।
তৃণমূলের ব্যারাকপুর জেলা সভাপতি পার্থ ভৌমিকও বলেন, ‘‘পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করুক। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হোক। তা হলেই সত্য প্রকাশ্যে আসবে। অর্জুন সিংহের বাড়িতে সব সময় ৩০-৪০ জন দুষ্কৃতী থাকে। তারাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে কয়েক জনকে মারধর করে। তার পরে পুলিশের নজর ঘোরাতে তারাই সাংসদের বাড়িতে বোমা মেরেছে।’’
অর্জুন অবশ্য পরে বলেন, ``যদি মারামারি হয়ে থাকে, তার জন্য পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করুক। তা বলে মারামারির বদলে বোমা ছোড়া হবে? পুলিশ আবার সেটাকে যুক্তি হিসেবে খাড়া করছে? মজদুর ভবন থেকে কারা বেরিয়েছিল মারামারি করতে, পুলিশ সেই ফুটেজ কেন দেখাচ্ছে না। পুলিশ তো দলদাসে পরিণত হয়েছে। দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দিচ্ছে।’’
ভবানীপুর বিধানসভায় বিজেপির লড়াইয়ের দায়িত্বে অর্জুন একা নেই। দলের রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সিংহ পুরো প্রস্তুতি দেখভাল করবেন। এ ছাড়া, ওই কেন্দ্রের প্রতিটি ওয়ার্ডের ভোটের দায়িত্বে এক জন করে দলীয় বিধায়ক থাকবেন। দিলীপ এ দিন বলেন, ‘‘নিঃসন্দেহে এই নির্বাচনটা উঁচু স্তরের। দল পুরো শক্তি দিয়ে লড়বে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের রাজ্যে মন্ত্রী নেই, কিন্তু বিধায়ক, সাংসদ তো আছেন। তাঁরাই নেতৃত্ব দেবেন।’’
যে সিপিএমকে বিজেপি নেতৃত্ব নিয়ম করে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন, তারাও এ দিন ভবানীপুরের প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। রাজ্য বিধানসভার একমাত্র বিরোধী দল বিজেপি-র প্রার্থী ঘোষণায় দেরি হচ্ছে কেন? দিলীপের জবাব, ‘‘আমরা সর্বভারতীয় দল। আমরা রাজ্যের পক্ষ থেকে নাম পাঠাই। দলের সংসদীয় বোর্ড বিচার করে প্রার্থী ঘোষণা করে। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হবে। আর সিপিএম-কংগ্রেস ভোটে প্রার্থী দিল কি দিল না, এটা কোনও বিবেচ্য বিষয়ই নয়। লড়াই তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যেই হবে। আমরা পুরো তৈরি।’’