বার বার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের দিকে আঙুল তুলছে বিরোধীরা। সেই তালিকায় এ বার ‘নয়া সংযোজন’ তিলজলাকাণ্ড। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
নিয়োগ দুর্নীতি, ডিএ আন্দোলনকে ইস্যু করে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়িয়েছে বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি। বার বার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের দিকে আঙুল তুলছে তারা। সেই তালিকায় এ বার ‘নয়া সংযোজন’ তিলজলাকাণ্ড। সাত বছরের নাবালিকাকে যৌন নির্যাতন এবং খুন আর তার তদন্তে এসে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের ‘বাধা’ পাওয়ার ঘটনায় রাজ্যকে নিশানা করছে বিজেপি। বিশেষত, জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়ঙ্ক কানুনগোকে থানায় ‘মারধর’ করার যে অভিযোগ উঠেছে, তা দেখিয়ে বাংলার আইনের শাসন ‘গুরুতর পর্যায়ে’ বলে প্রশ্ন তুলছে গেরুয়া শিবির। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে টুইট করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি সূত্রের খবর, আগামিদিনে এ নিয়ে কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে তারা।
শনিবার শুভেন্দু একটি টুইটে লেখেন, ‘‘জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন হল সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। যা ২০০৫ সালের ‘কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটস্’-এর অধীনস্থ। সেই কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়ঙ্ক কানুনগো তিলজলা থানার ভিতর প্রহৃত হয়েছেন! এটাই বাংলার আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি।’’ বস্তুত, শুভেন্দু যে ‘পরস্থিতি’র কথা বলেছেন, খোদ প্রিয়ঙ্কও সেই একই অভিযোগ করেছেন। তার মধ্যে শনিবার দেখা গিয়েছে মালদহের গাজোলে নাবালিকা ধর্ষণকাণ্ডের তদন্তে গিয়ে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের সঙ্গে রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের আর একপ্রস্ত গন্ডগোলের ছবি।
এই প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘গোটা দেশের কাছে লজ্জার ঘটনা ঘটেছে গতকাল (শুক্রবার)। বাংলা এবং বাঙালির মানুষের কাছে এটা লজ্জার যে, শিশুদের অধিকার রক্ষার কমিশনের চেয়ারম্যানের গায়ে হাত তুলছে পুলিশ!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘তা হলে বাংলার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী তথা সাধারণ মানুষের অবস্থা ঠিক কেমন, তা সহজে অনুমেয়।’’ তবে পাশাপাশিই সুকান্ত জানিয়েছেন, এই বিষয়ে আলাদা করে তাঁরা কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট করছেন না। কারণ, সমগ্র বিষয়টি সম্পর্কে কেন্দ্র ওয়াকিবহাল। তবে এ নিয়ে বিজেপি যে রাজনীতির ময়দানে নামছে, তার ইঙ্গিত মিলছে বিজেপির রাজ্য সভাপতির কথায়।
২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের পরে ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’-র অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। তখনও সরেজমিনে ঘটনাপ্রবাহ দেখতে এসে বাধা পাওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন জাতীয় মহিলা এবং শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিরা। রিপোর্টে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘অসহযোগিতা’র অভিযোগও তুলেছিলেন তাঁরা। কিন্তু খোদ জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানকেই হেনস্থা করা হচ্ছে এবং তাতে নাম উঠছে পুলিশের— এই ঘটনাকে ‘বেনজির’ বলে বর্ণনা করছে গেরুয়া শিবির। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘তিলজলার ঘটনা একটা উদাহরণ মাত্র। এ দিয়ে সংবিধানের রক্ষাকর্তারা হয়তো বুঝতে পারছেন যে, এ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক কী। পশ্চিমবঙ্গে মানবাধিকার এবং আইনের শাসন ঠিক কোন পর্যায়ে গিয়েছে, সেটাও প্রত্যক্ষ করছে সারা দেশ।’’
এ নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে রাজি নয় শাসকশিবির। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষকে শনিবার একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। অন্য দিকে, প্রিয়ঙ্ক তিলজলা থানার যে পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, সেই বিশ্বক মুখোপাধ্যায় ছুটিতে গিয়েছেন বলে শনিবার প্রশাসন সূত্রে খবর মিলেছে।