সুষ্ঠু পুরভোটের দাবিতে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখরের কাছে শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি নেতারা
কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়, কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশ দিয়েই ভোট হবে কলকাতা পুরসভার। কলকাতা পুলিশ মঙ্গলবার নিরাপত্তা বন্দোবস্তের সবিস্তার রিপোর্ট জমা দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে। সূত্রের খবর, নিরাপত্তা বন্দোবস্তের সেই রিপোর্টে অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর আশ্বাস দিয়েছে লালবাজার। ফলে, এই ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন নেই বলেই মনে করছে কমিশন। বিরোধী দল বিজেপি এবং সিপিএম অবশ্য কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ভি ভি প্যাট ব্যবহার করে ভোট করানোর পক্ষপাতী। ওই দাবি নিয়ে এ দিনই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাস ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করেছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির প্রতিনিধিদল।
কমিশন আবার এ দিনই ভোট-নিরাপত্তা নিয়ে নিজেদের অবস্থান রাজভবনকে জানিয়েছে। সন্ধ্যায় রাজ্যপাল ধনখড় তা টুইটও করেছেন। তাতে কমিশনের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে নিরাপত্তা পরিকল্পনা পাওয়া গিয়েছে। প্রতি ভোট-কেন্দ্র চত্বর এবং সেক্টরে সশস্ত্র পুলিশ থাকবে। রাজ্য আশ্বাস দিয়েছে, অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ ভোট পরিচালনায় পর্যাপ্ত বাহিনী এবং ব্যবস্থা থাকবে। কলকাতা পুরসভা শুধুমাত্র একটি নির্বাচন বলে কমিশন এই প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। তবে পরিস্থিতির দিকে নিয়মিত নজর থাকবে।
কার্যত সমালোচনার সুরেই কমিশনকে রাজ্যপাল পাল্টা জানিয়েছেন, রাজ্য পুলিশের পর্যাপ্ত সংখ্যা না থাকলেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হয়, এমনটা নয়। বরং নিরপেক্ষতার প্রশ্নে এই বাহিনী মোতায়নের যৌক্তিকতার দিকটি কমিশনের নজরে রাখা উচিত। বিরোধীরাও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবি জানাচ্ছেন। রাজ্যপালের মতে, নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে তা ভেবে দেখা উচিত কমিশনের। পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, পুর ভোটে ভি ভি প্যাট ব্যবহারেও উপযুক্ত পদক্ষেপ করা দরকার।
তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের অবশ্য পাল্টা যুক্তি, ‘‘পুরভোটে সিএপিএফ দাবি করে রাজ্যপাল রাজ্য পুলিশকে কালিমালিপ্ত করছেন। তিনি শাহেনশাহের নির্দেশে বিজেপি নেতাদের কথার প্রতিধ্বনি করছেন। সিএপিএফ মহান? নাগাল্যান্ডে কী হল? ’’
আদালতে ভোট-যন্ত্র নিয়ে দাবি তোলার পাশাপাশি কলকাতা পুরভোটে ভি ভি প্যাট ব্যবহারের দাবিতে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু, দীনেশ ত্রিবেদী, অগ্নিমিত্রা পাল, শিশির বাজোরিয়া-সহ বিজেপি নেতারা। তাঁদের দাবি, গত লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে আধুনিকতম ইলেকট্রনিক ভোট যন্ত্রের (ভি ভি প্যাট) ব্যবহার হয়েছিল। এই পুরভোটেও সেই যন্ত্রের ব্যবহার করতে হবে। ভোট বিশেষজ্ঞদের অনেকেই জানাচ্ছেন, গত লোকসভা এবং বিধানসভায় এম-৩ মানের ভোটযন্ত্র ব্যবহার হয়েছিল। আসন্ন পুরভোটে ব্যবহার হবে এম-২ মানের যন্ত্র। রাজ্যের নির্বাচন কমিশনকেই যে ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনতে হয়েছিল, সেই তথ্য-সহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে শুভেন্দুর দাবি, কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া অবাধ ও স্বচ্ছ পুরভোট সম্ভব নয়। ভি ভি প্যাট ব্যবহার না হলেও সন্দেহের জায়গা থেকে যাবে। একই ভাবে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘ভোট লুটের সব রকম ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে! এর আগে পঞ্চায়েত এবং পুরসভার ভোটে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তার পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কি না, অবশ্যই প্রশ্ন আছে। ভি ভি প্যাট ব্যবহারও কেন হবে না, তার কোনও যুক্তি নেই!’’
পরে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেও তাঁদের দাবির কথা জানিয়েছেন বিজেপির নেতারা। রাজভবন থেকে বেরিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘রাজ্য নির্বাচন কমিশন, রাজ্য সরকার, পুলিশ কেউই যখন অবাধ ভোট করতে চায় না, তখন সাংবিধানিক প্রধানের কাছে আসা ছাড়া উপায় থাকে না। কমিশন থেকে কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনী নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপালকে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, তাতে তিনি সন্তুষ্ট নন। কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হবে না, তা তিনি জানতে চেয়েছেন। তিনি আশা করছেন, বিস্তারিত রিপোর্ট আসার পরে তাঁর ক্ষমতার মধ্যে যা করার, করবেন।’’
কমিশন সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, লালবাজারের প্রস্তাব অনুযায়ী কম-বেশি ২৩ হাজার পুলিশ ব্যবহার করা হতে পারে পুরভোটে। ২৮৬টি সেক্টরের প্রতিটিতে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। মোট ১৬৭০টি ভোট-কেন্দ্র চত্বরের এক একটিতে ন্যূনতম দু’জন করে সশস্ত্র পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকতে পারেন। পুরসভা এলাকার ১৪৪টি ওয়ার্ডের জন্য ৭২টি আর টি মোবাইল দল, ৩৫টি হেভি রেডিয়ো ফ্লাইং স্কোয়াড, ৭৮টি কুইক রেসপন্স দল এবং আচমকা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত মোকাবিলার জন্য ৮০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ব্যবহারের প্রস্তাব রয়েছে। মোট বুথের (৫১২৭টি) অন্তত ২৫% ভোটকেন্দ্রে (প্রধানত অতি-স্পর্শকাতর এবং স্পর্শকাতর)
সিসি ক্যামেরা অথবা ভিডিয়ো রেকর্ড করার ব্যবস্থা করা হবে। পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, ভোটে বেশির ভাগ বাহিনী থাকবে কলকাতা পুলিশের। রাজ্য পুলিশের থেকেও কিছু বাহিনী আনা হবে। তবে অতি-স্পর্শকাতর এবং স্পর্শকাতর এলাকার ভোট-নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে কলকাতা পুলিশের উপরেই।