উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে আলিপুরদুয়ারকে। ফাইল চিত্র।
তিনটি ট্রেন উত্তরবঙ্গ থেকে। চারটি দক্ষিণবঙ্গ থেকে। ১৩ সেপ্টেম্বর নবান্ন অভিযানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মী-সমর্থকদের আনার জন্য মোট সাতটি ট্রেন ভাড়া করছে বিজেপি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নামে ‘বিশেষ ট্রেন’ হলেও সব ক’টির পিছনেই ‘রাজনৈতিক কার্যকারণ’ উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
দক্ষিণবঙ্গের চারটি ট্রেন আসবে বীরভূমের রামপুরহাট, পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা, ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়া থেকে। উত্তরের ট্রেনগুলি আসবে কোচবিহারের তুফানগঞ্জ, আলিপুরদুয়ার ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থেকে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রেনগুলি ১৬ থেকে ২০ কামরার হওয়ার কথা। এক একটি ট্রেনে খুব বেশি হলে ৩০০০-৩৫০০ যাত্রী ধরবে। বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, দক্ষিণের ট্রেনগুলির ক্ষেত্রে এমন সব জায়গাকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যেখানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রভাব রয়েছে। সূত্রের বক্তব্য, দিঘা শুভেন্দুর নিজের জেলায়। ঝাড়গ্রামেও তার প্রভাব যথেষ্ট। পুরুলিয়ায় তিনি এক সময়ে দায়িত্বে ছিলেন। এই তিনটি ট্রেন আসার কথা সাঁতরাগাছিতে। সেখানেও সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকছেন শুভেন্দু। ঝাড়গ্রাম বা দিঘা থেকে সড়কপথে সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টায় নবান্ন পৌঁছনো সম্ভব। তা হলে ট্রেন কেন? বিজেপি সূত্রে দাবি, পথে নানা ভাবে কর্মী-সমর্থকদের আটকে দিতে পারে তৃণমূল। তাই ট্রেন ভাড়া করা হয়েছে। রামপুরহাট অনুব্রত মণ্ডলের খাসতালুক বীরভূম জেলায়। তাই এই এলাকাকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে দাবি বিজেপি সূত্রে।
উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে আলিপুরদুয়ারকে। এই জেলা এখনও বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৯-এর লোকসভা তো বটেই, ২০২১-এর বিধানসভাতেও এখানে তৃণমূল দাঁত ফোঁটাতে পারেনি। কোচবিহারের তুফানগঞ্জ থেকে আর একটি ট্রেন ছাড়বে। সেই তুফানগঞ্জও আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। তা ছাড়া এই বিধানসভা কেন্দ্রটির বিধায়ক মালতী রাভা দলের কোচবিহারের প্রাক্তন জেলা সভানেত্রী এবং রাজবংশী।তিনি জেলায় বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ মুখ। এর পাশাপাশি বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের শহর বালুরঘাট থেকেও একটি ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুকান্ত ২০১৯ সালে তৃণমূলের অর্পিতা ঘোষকে হারিয়ে বালুরঘাটের সাংসদ হন। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের নিরিখে এই লোকসভা আসনে বিজেপি লাখখানেক ভোটে পিছিয়ে ছিল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তাই সুকান্তের এলাকাকেও বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে দল।
এর মধ্যে ট্রেন না পাওয়ায় অভিমানী জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির অন্দরেই এমন আলোচনা শুরু হয়েছে। বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, “জলপাইগুড়ি থেকে হাজার-হাজার বিজেপি কর্মী, কার্যকর্তারা যদি ট্রেনে উঠতে পারেন, তা হলে নবান্ন অভিযানে শামিল হবেন।”
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে বলা হয়েছে, ১৩ তারিখের জমায়েতে মূলত দক্ষিণবঙ্গের হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, পুরুলিয়া থেকে লোকজন আনার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে বুথ থেকে এক জন আনাই লক্ষ্য। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মণ বলেন, ‘‘মূলত দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি থেকে সর্বোচ্চ জমায়েতের চেষ্টা করা হচ্ছে। তার মানে যে উত্তরবঙ্গ থেকে কম লোক আসবেন, এমনটা নয়। আমাদের হিসেব অনুযায়ী প্রায় হাজার পনেরো লোক উত্তরবঙ্গ থেকে আসছেন।