কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফল হাতে আসা মাত্রই সুদিনের ইঙ্গিত পেয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু তখনও তাঁদের কাছে এই খবর ছিল না যে, কোচবিহারের দু’টি শহরাঞ্চলে তাঁদের দল শাসক তৃণমূলকে ধরাশায়ী করে দিয়েছে! আরও একটি শহরে তৃণমূলের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে তারা। উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশের দিন জানা গিয়েছিল, ২০১৪-র তুলনায় এ বার কোচবিহারে বিজেপি-র ভোট বেড়েছে প্রায় ১২%। পরবর্তী বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, কোচবিহার পুরসভার ২০টি ওয়ার্ডের সব ক’টিতে এবং মাথাভাঙা পুরসভার ১২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯টিতে জিতেছে বিজেপি। দিনহাটা পুরসভার ১৬টা ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টায় এগিয়ে তারা।
রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ কোচবিহারের এই বিন্দুতেই গোটা রাজ্যের সিন্ধু দেখতে শুরু করেছে। তাদের মতে, রাজ্যে বাম এবং কংগ্রেস ক্রমাগত দুর্বল হচ্ছে এবং সেই সুযোগেই বিরোধী পরিসর দখল করছে বিজেপি। যেমন, কোচবিহারের দিনহাটায় ফরওয়ার্ড ব্লকের শক্ত ঘাঁটি ছিল। উপনির্বাচনে তারা কোচবিহারে মাত্র সাড়ে ৬% ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে নেমে গিয়েছে। ফব-র এই ক্ষয়ে শহরে লাভ হয়েছে বিজেপি-র। ফব থেকে তৃণমূলে যাওয়া উদয়ন গুহও বলেন, ‘‘বামেদের একটি বড় অংশের ভোট বিজেপিতে গিয়েছে।’’
কিন্তু তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অগণতন্ত্র এবং নীতিগত প্রশ্নে বাম ও কংগ্রেসও কম কর্মসূচি নিচ্ছে না। তা সত্ত্বেও বিজেপি-র জমি এত বাড়ছে কী ভাবে? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, ইদানীং প্রায়ই বিজেপি-র ব্যাটে ফুলটস বল দিচ্ছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী মোদী— সকলকেই কড়া ভাষায় আক্রমণ করছেন তিনি। এর ফলে বিজেপি অতিরিক্ত গুরুত্ব পাচ্ছে। তৃণমূল নেত্রী মনে করছেন, এর ফলে মেরুকরণ হয়ে বিজেপি-র ভোট বাড়লেও তা নির্দিষ্ট সীমার বেশি এগোবে না। বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হবে। আর তৃণমূল পুরো সংখ্যালঘু এবং আংশিক হিন্দু ভোট পেয়ে জয় নিশ্চিত করবে।
দিলীপবাবুও মুখ্যমন্ত্রীর এই সমীকরণের হিসেব আঁচ করতে পারছেন। কিন্তু তিনি দেখছেন, এই মেরুকরণে তাঁদের ভোট বাড়ছে। বস্তুত, বিজেপি-কে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতাই জানাচ্ছেন দিলীপবাবু।