বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাত ধরে দলে যোগদান। ছবি পিটিআই।
গত লোকসভা ভোটের ফলে উজ্জীবিত বিজেপি এখন বিধানসভা ভোটের লক্ষ্যে জেলায় জেলায় সংগঠন বাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। পুজোর আগে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা এবং নভেম্বরের গোড়ায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যে এসে বিজেপি নেতাদের মূলত দু’টি কাজ দিয়ে গিয়েছেন। এক, বুথ স্তরে সংগঠন মজবুত করা এবং দুই, অন্য দল থেকে লোক আনা। সেই কাজ হচ্ছে কি না, তা দেখতে ডিসেম্বর থেকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রতি মাসেই রাজ্যে আসার কথা নড্ডা এবং শাহের। পাশাপাশি, সাংগঠনিক অগ্রগতিতে কোনও ফাঁক যাতে না থাকে, তার জন্য রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সহ পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন ও অমিত মালব্য, আর এক কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশ দীর্ঘ সময় দিচ্ছেন এ রাজ্যেই। দলের রাজ্য নেতৃত্বের দাবি, এই সব উদ্যোগে ফলও মিলছে হাতেনাতে। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ— বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক সামলাতে জেলায় জেলায় মঞ্চ বেঁধে ‘যোগদান মেলা’ করতে হচ্ছে নেতাদের।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ওই পদে যাওয়ার পর প্রায় পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত জেলা জেলায় চষে বেড়ান। ইদানীং তাঁকে জেলায় জেলায় দেখা যায় ‘যোগদান মেলা’ করতে। যোগদানকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই বাম। গত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে আটটি লোকসভা আসনের মধ্যে সাতটি আসন জিতেছিল বিজেপি। লোকসভার ফলের নিরিখে উত্তরবঙ্গে ৩৪টি বিধানসভা আসনে এগিয়ে রয়েছে তারা। বিজেপির উত্তরবঙ্গ জ়োনের পর্যবেক্ষক তথা রাজ্য দলের সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের পরবর্তী এক বছরে উত্তরবঙ্গে আমাদের সংগঠন অনেক বেড়েছে। তৃণমূল, বাম এবং কংগ্রেস তিন দল থেকেই আমাদের দলে অনেক কর্মী যোগ দিয়েছেন। আগামী বিধানসভা ভোটে উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ আসন আমরাই জিতব।’’
রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, লোকসভা ভোটের পরবর্তী এক বছরে দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলির আরামবাগ এবং বর্ধমান পূর্ব এবং পশ্চিমেও তাঁদের সংগঠন বেড়েছে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম—এই চারটি লোকসভা আসন বিজেপি জিতেছে। গত এক বছরে সেখানে সংগঠন এবং জনপ্রিয়তায় কোনও ক্ষয় হয়নি বলেও দলীয় নেতৃত্ব দাবি করছেন। বস্তুত, ওই জেলাগুলিতে বিজেপির সভায় ভিড় হচ্ছে যথেষ্ট এবং মাঝেমধ্যেই অন্য দল থেকে কর্মীদের যোগদান করতে দেখা যাচ্ছে। দিলীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘আগামী বছর ২০০ আসন জিতে আমরা রাজ্যে সরকার গড়ব।’’
আরও পড়ুন: অনুব্রতর গড়ে তৃণমূলে ভাঙন, দল ছাড়লেন রামপুরহাটের কাউন্সিলর
বিজেপি যখন তাদের উত্থানের ছবি তুলে ধরতে ব্যস্ত, তখনই রাজ্যের শাসক তৃণমূলের অন্দরের দ্বন্দ্বও সামনে আসছে। রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে কোচবিহারের বিধায়ক মিহির গোস্বামী পর্যন্ত অনেকেই দলের নবীন প্রজন্মের নেতৃত্বের প্রতি অসন্তুষ্ট। পেশাদার ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোরকে শিখণ্ডী করে অনেকেই সেই অসন্তোষ প্রকাশ্যে ব্যক্ত করছেন। তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত জানিয়েছেন, তিনি আগামী বছর আর বিধানসভা ভোটে দাঁড়াতে চান না। বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, প্রতিপক্ষ শিবিরের এই সব দ্বন্দ্বের ফায়দা ভোটে তাঁরাই পাবেন।
কিন্তু বিজেপির অন্দরে এর উল্টো মতও আছে। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুঙ্গ তাঁদের সঙ্গ ছেড়ে তৃণমূল শিবিরে যাওয়ায় উত্তরবঙ্গে পাহাড় থেকে ডুয়ার্স—বেশ কয়েকটি বিধানসভা আসনের ফল নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। মুর্শিদাবাদ এবং কলকাতায় যে সংগঠন ভাল নয়, তা-ও মেনে নিচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের আরও বক্তব্য, নদিয়ায় সংগঠনের তুলনায় মতুয়া সমাজে দলের জনপ্রিয়তাই ভরসা।
আরও পড়ুন: খেজুরিতে তৃণমূল প্রতীকের সামনে শুরু মিছিল, শুভেন্দুর মুখে ‘বন্দেমাতরম’
শুভেন্দু তৃণমূল ছাড়তে পারেন বলে জল্পনা তুঙ্গে। পূর্ব মেদিনীপুরে বহু তৃণমূল কর্মী ইতিমধ্যে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে খবর। রাজ্য বিজেপির একাংশের প্রশ্ন, তৃণমূলে ক্ষুব্ধ মানুষ যদি দেখেন, নানা কাণ্ডে অভিযুক্ত ওই দলের অনেক নেতাই গেরুয়া শিবিরে ঢুকছেন এবং প্রাধান্য পাচ্ছেন, তা হলে তাঁরা কি খুশি হবেন?
যদিও প্রকাশ্যে দিলীপবাবু থেকে শুরু করে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সকলেই দাবি করছেন, এ রাজ্যে তাঁদের সরকার গড়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র। মেনন এ দিনও টুইট করেছেন, ‘‘তৃণমূল ডুবন্ত জাহাজ। মমতা রাজ্যের মতোই নিজেদের দলেও গণতন্ত্র ধ্বংস করেছেন। তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হিংসা এবং তোষণের রাজনীতির দীর্ঘ জমানার অবসান নিশ্চিত।’’ তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার পাল্টা মন্তব্য, ‘‘যাঁরা বাংলা চেনেন না, তাঁরাই এ ধরনের প্রলাপ বকেন। এ রাজ্যের মানুষ মাথা উঁচু করে প্রতিবাদ করতে জানেন বলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের ভরসা।’’