প্রতীকী ছবি।
করোনা সংক্রমণ দ্রুত হারে বাড়তে থাকায় রাজ্যে আসন্ন চার পুরসভার ভোট অন্তত এক মাস পিছনোর দাবি তুলল বিজেপি। এই দাবিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে শুক্রবার চিঠিও দিয়েছে তারা। গঙ্গাসাগর মেলাতেও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলেছে বিজেপি। তৃণমূল অবশ্য পাল্টা বলেছে, গত বিধানসভা ভোটের সময় বিজেপি যে ভূমিকা নিয়েছিল, তাতে এখন ভোট পিছনোর দাবি তাদের মুখে মানায় না। আর গঙ্গাসাগর নিয়েও রাজ্য সরকার আদালতের নির্দেশ মেনে চলবে।
বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এ দিন জানান, তাঁরা প্রচারে বেরিয়ে দেখছেন, অনেক ভোটার করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তাঁদের বাড়িতে প্রচারে যাওয়া যাচ্ছে না। যাঁরা আক্রান্ত হননি, তাঁরাও সংক্রমণের ভয়ে প্রার্থী এবং রাজনৈতিক দলের কর্মীদের বাড়িতে ঢুকতে দিতে চাইছেন না। অনেক ভোটারই বলছেন, তাঁদের ভোট দিতে যাওয়া অনিশ্চিত। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আগামী সাত দিন বাড়ি থেকে না বেরনোর জন্য মানুষের কাছে আর্জি জানাচ্ছেন। বিজেপি নেতৃত্বের আরও ব্যাখ্যা, ডাক্তার, নার্স, পুলিশকর্মী, নির্বাচন কমিশনের কর্মী--- সকলের মধ্যেই করোনার সংক্রমণ ক্রমবর্ধমান। ফলে চিকিৎসা পরিষেবা থেকে শুরু করে ভোটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা—সব কিছুই সঙ্কটে। এই প্রেক্ষিতে শমীকের
প্রশ্ন, ‘‘মানুষই যদি বাড়ি থেকে বেরোতে না পারেন, তা হলে ভোট হবে কাকে নিয়ে? গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য মানুষের জীবন-বিপন্ন করা যায় না।’’
যদিও প্রশ্ন উঠেছে, গত বছর বিধানসভা ভোট চলাকালীন করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে নানা মহল থেকে দাবি জানানো হয়েছিল, শেষ তিন দফার ভোট একসঙ্গে করে ফেলা হোক। তখন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন তাতে রাজি হয়নি। বিজেপিও সেই দাবিতে সহমত হয়নি। তা হলে এখন তারা করোনার জন্য পুরভোট পিছোতে চাইছে কেন? বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘তখন আমাদের রাজ্যকে বাঁচানোর বিষয় ছিল।’’ রাজ্যকে বাঁচানো বলতে বিজেপিকে রাজ্যের ক্ষমতায় আনার কথা বোঝাতে চেয়েছেন সুকান্ত। কিন্তু সেই সময় করোনায় মৃত্যু অনেক বেশি হচ্ছিল। তা হলে ‘রাজ্যকে বাঁচানোর প্রয়োজন’ কি মানুষের জীবনের চেয়েও বেশি? শমীক এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘তখন মোটেই মৃত্যু এবং সংক্রমণ খুব বেশি ছিল না। এখনকার পরিস্থিতি এবং সংক্রমণের হারের সঙ্গে তখনকার পরিস্থিতি মোটেই তুলনীয় নয়।’’
তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘এখন যাঁরা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন, তাঁরাই আট দফায় বিধানসভা ভোট করে রাজ্যবাসীকে চরম বিপদের মুখে ফেলেছিলেন। পুরভোট করা সম্ভব কি না, তা আদালতের বিচার্য। নির্বাচন কমিশনের মতামতের উপরে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বলতে পারি, নির্বাচন সংক্রান্ত যে সিদ্ধান্ত, তারা নেবে, তা আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।’’
করোনা আবহে গঙ্গাসাগর মেলাতেও জনসমাবেশে নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলেছে বিজেপি। তাদের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী গঙ্গাসাগরে ৫ লক্ষ মানুষের জমায়েত হবে। তাতে সংক্রমণ যত বাড়বে, তা সামলানোর পরিকাঠামো রাজ্যের নেই। তাই গঙ্গাসাগর মেলায় সমাবেশ নিয়ন্ত্রিত হোক। বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ-সহ যে সব রাজ্য থেকে গঙ্গাসাগর মেলায় পু্ণ্যার্থীরা আসেন, সেই সব রাজ্য সরকারের কাছেও মেলামুখী মানুষের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার আর্জি জানাবেন বিজেপি নেতৃত্ব। শমীক জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছেও যাবেন।
কলকাতা হাইকোর্ট অবশ্য গঙ্গাসাগর মেলায় অনুমতি দিয়েছে। সে বিষয়ে সুকান্তের প্রতিক্রিয়া, ‘‘গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে কোর্টের রায় মেনে চলতে হবে। আমরা সেই রায় মেনে চলব। যে কমিটি হয়েছে, আশা করি, তারা তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করবে। এমন কিছু নিয়ম-কানুন তৈরি করে মেলা হোক, যাতে মানুষের সংক্রমণ না হয়। তবে পাঁচ লক্ষ মানুষকে সংক্রমণ-মুক্ত রাখা অসম্ভব বলে আমি মনে করি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, হাই কোর্টের এই রায় শীর্ষ আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।’’
বিজেপি নেতৃত্ব কি গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ করার দাবি তুলবেন? শমীকের জবাব, ‘‘গঙ্গাসাগরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান চালু রেখে মেলাটুকু রাজ্য সরকার বন্ধ করে দিলে আমাদের আপত্তি নেই। ওখানে যে ৪৫ হাজার মানুষ পৌঁছে গিয়েছেন, তাঁদের সেখান থেকে বের করে দেওয়া গেলে ভাল।’’
বিজেপির এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবু বলেন, ‘‘গঙ্গাসাগরে মেলা বন্ধের নির্দেশ আদালত দেয়নি। আমাদের সকলের দায়িত্ব আদালত যে সব বিধি ও সতর্কতার কথা বলেছে, তা রূপায়ণে প্রয়োজনীয় ভুমিকা নেওয়া। আদালতের কমিটিতে তো বিরোধী দলনেতাও আছেন। তিনিও তাঁর দায়িত্ব পালন করুন।’’