অখিল গিরির পদত্যাগ নিয়ে সরব হচ্ছে বিজেপি। ফাইল চিত্র।
মন্ত্রিসভা থেকে অখিল গিরির অপসারণের দাবি তুলে সমাজমাধ্যমে সরব হল বিজেপি। শুক্রবার নন্দীগ্রামে এক দলীয় সভায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর বিরুদ্ধে কুকথা বলেছেন কারামন্ত্রী। যা নিয়ে উত্তাল দেশের রাজনীতি। নিজের মন্তব্য নিয়ে ‘অনুতপ্ত’ বলে সাফাই দিলেও, অখিলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ কমেনি। রামনগরের বিধায়কের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছে বিজেপি। শনিবার দিনভর বিভিন্ন থানায় এফআইআর দায়ের ও কুশপুত্তলিকা দাহ করার পর রবিবার আক্রমণের মাত্রা আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিলেন বিজেপি নেতৃত্ব।
রবিবার সকাল থেকে বিজেপির সাংসদ বিধায়করা সমাজমাধ্যমে মন্ত্রিসভা থেকে অখিলের অপসারণের দাবিতে সরব হয়েছেন। বালুরঘাটের অর্থনীতিবিদ বিধায়ক অশোক লাহিড়ী ‘স্যাকঅখিলগিরি’ হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার করে লিখেছেন, ‘‘দেশের সম্মাননীয়া রাষ্ট্রপতি শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মুর প্রতি অবমাননাকর এবং নোংরা মন্তব্য করেছেন তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী অখিল গিরি। একজন আদিবাসী নারীর প্রতি এই মন্তব্য কখনই মেনে নেওয়া যায় না।’’ নিজের টুইটটি তিনি ট্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডাকে।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা রায়গঞ্জের বিজেপি সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী আবার ওই হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার করে রাষ্ট্রপতি ভবনের টুইটার অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ট্যাগ করে একটি টুইট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘রাষ্ট্রপতির অপমান প্রতিটি উপজাতি সম্প্রদায়ের পাশাপাশি জাতির প্রতিটি নারীর অপমান। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে সম্পূর্ণ নীরব।’’ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা ‘স্যাকঅখিলগিরি’ হ্যাশট্যাগের ব্যবহার করে লিখেছেন, ‘‘দেশের প্রথম মহিলা আদিবাসী রাষ্ট্রপতি শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মুর প্রতি অখিল গিরির অপমানজনক মন্তব্য একটি লজ্জাজনক ঘটনা, কিন্তু তা সত্ত্বেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করবেন না, কারণ তিনি আদিবাসী বিরোধী।’’
একই হ্যাশট্যাগের ব্যবহার করে জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায় লিখেছেন, ‘‘দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতিকে অসম্মান করে, তৃণমূল প্রমাণ করেছে যে তারা নারীর ক্ষমতায়ন এবং আদিবাসী উন্নয়নের বিরুদ্ধে।’’ তুফানগঞ্জের বিজেপি বিধায়ক মালতী রাভা লিখেছেন, ‘‘আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের অপমান করা, জনজাতিদের সঙ্গে হাতে গ্লাভস পরে নাচ, আর কত উপায়ে তৃণমূল আদিবাসীদের অপমান করবে?’’ শালতোড়া বিধানসভার বিধায়ক চন্দনা বাউড়ি ‘স্যাকঅখিলগিরি’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে লিখেছেন, ‘‘আমার নেতা জনজাতি সম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত করেছেন, আপনার নেত্রী জনসমক্ষে জনজাতিদের অপমান করেছেন। পার্থক্য চিনে নিন!’’ বাকুঁড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানা ওই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে লিখেছেন, ‘‘আদিবাসীদের অপমান এবং দেশের প্রথম মহিলা আদিবাসী রাষ্ট্রপতিকে অপমান করার জন্য আমরা মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য অখিল গিরির পদত্যাগ চাই।’’
প্রসঙ্গত, অখিলের ওই বিতর্কিত ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তৃণমূল তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপর চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে বিজেপি। রবিবার সকালেই রাজধানী দিল্লিতে অখিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। বিতর্কিত মন্তব্য করার পর থেকেই কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন অখিল। কারণ, এই মন্তব্যের দায় নিতে চায়নি তাঁর দল। বরং প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে তাঁর মন্তব্যের নিন্দাই করেছে তৃণমূল। বাংলার রাজনীতির কারবারিদের মতে, আগামী কয়েক দিন অখিলের মন্তব্য নিয়ে সরগরম থাকবে বাংলা তথা দেশের রাজনীতি।