রাজপথে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রতিবাদ। নিজস্ব চিত্র।
কালিয়াগঞ্জের ঘটনার প্রতিবাদে নেমে রাজপথে বচসায় জড়াল বিজেপি ও কংগ্রেস। যা নিয়ে সাময়িক উত্তেজনা ছড়াল সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের কাছে।
উত্তর দিনাজপুরে প্রথমে নাবালিকার মৃত্যু ও তার পরে রাধিকাপুরে পুলিশের গুলিতে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুক্রবার রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিল রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চা। একই ঘটনায় এ দিন প্রতিবাদ মিছিল ছিল প্রদেশ কংগ্রেসের। হিন্দ সিনেমার কাছে দুই মিছিল মুখোমুখি হয়ে গেলে বচসা বাধে দু’পক্ষের। রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হলেও বিজেপি ও কংগ্রেস কর্মীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে তরজায় জড়িয়ে পড়েন।
রাজ্য বিজেপির সদর দফতর থেকে শুরু করে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ হয়ে যুব মোর্চার মিছিল ধর্মতলার দিকে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার বদলে মিছিল কলেজ স্ট্রিট, নির্মল চ্যাটার্জি স্ট্রিট হয়ে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের দিকে এগোতে থাকে। এই রাজ্যে নারীদের অবস্থা বোঝাতে মোর্চার মহিলা কর্মীরা দড়ি দিয়ে হাত বেঁধে মিছিলে হাঁটছিলেন। সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারেই জমায়েত করে প্রদেশ কংগ্রেসের মিছিল গণেশ অ্যাভিনিউ, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের দিকে এগোচ্ছিল ধর্মতলা যাওয়ার জন্য। দুই মিছিল মুখোমুখি হয়ে গেলে উত্তেজনা ছড়ায়। কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা ‘বন্দে মাতরম’ স্লোগান দিতে থাকেন। যুব মোর্চার কর্মীরা পাল্টা ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান তোলেন। বিজেপি কর্মীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামে জয়ধ্বনি দিলে কংগ্রেস কর্মীরা পাল্টা রাহুল গান্ধীর নামে আওয়াজ তোলেন। রীতিমতো বচসা বেধে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ মিছিলকে দ্রুত এগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। রাজ্য যুব মোর্চার সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ, বিজেপির উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ এর পরে আসরে নামেন। দৃশ্যত তাঁরা হাত ধরে কর্মীদের টেনে আনতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যে মিছিল আবার নির্দিষ্ট পথে এগোয়।
মিছিল এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে ধর্মতলায় পড়তেই যুব মোর্চার কর্মী-সমর্থকেরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশপুতুল দাহ করেন। পুলিশ বাধা দিলে তাঁরা রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে পরপর দু’টি ব্যারিকেড ভেঙে গান্ধী মূর্তির দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এর পরে পুলিশের বিরাট বাহিনী এসে বাধা দিলে ইন্দ্রনীলের নেতৃত্বে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ শুরু করেন কর্মী-সমর্থকরা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৯ জন মহিলা-সহ ৪৬ জনকে গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে যায়। এই নিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, “পুলিশ অত্যাচার করছে। তার বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে বুকে গুলি করা হচ্ছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে পুলিশ পেটাচ্ছে। গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা আজ রাস্তায় নেমেছিলাম। পুলিশ আমাদের উপরে আক্রমণ করেছে।” পাল্টা তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “এটা রাজভবন অভিযান! ওই ক’টা লোক নিয়ে তো লোকে বনভোজন করতে যায়। রাজভবনের সামনে ১৪৪ ধারা থাকে। পুলিশ তো রুটিন কাজ করেছে।”
প্রদেশ কংগ্রেসের মিছিলে ছিলেন শুভঙ্কর সরকার, অসিত মিত্র, সুমন পাল, তাপস মজুমদার, মহম্মদ মুখতার, রানা রায়চৌধুরী, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, শাদাব খান, তপন আগরওয়াল, প্রদীপ প্রসাদ-সহ কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার নেতা-কর্মীরা। শুভঙ্কর বলেন, ‘‘উত্তর দিনাজপুরে পরপর ঘটনায় পুলিশ যথাযথ ভূমিকা নিতে পারেনি। তাদের উপরে কী নির্দেশ ছিল জানি না কিন্তু বারেবারেই পুলিশকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আর আগে তৃণমূল যা করত, এখনও বিজেপিও লাশ নিয়ে রাজনীতি করছে এবং বিভাজনের চেষ্টা করছে।’’ কালিয়াগঞ্জ-কাণ্ডে ‘দোষী’ পুলিশের কঠোর শাস্তি, সাধারণ মানুষের ন্যায্য দাবি পূরণ এবং পুলিশি দমন-পীড়ন বন্ধ করার দাবি জানিয়ে এ দিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য।