কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। — ফাইল চিত্র।
রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজভবন বনাম বিকাশভবন যুদ্ধের মধ্যেই নতুন বিতর্ক তৈরি হল। রাজ্যকে এড়িয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস নিযুক্ত কয়েক জন উপাচার্য। কলকাতার একটি হোটেলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে আলোচনাচক্রের নামে আসলে উপাচার্যদের নিয়ে ধর্মেন্দ্র বৈঠক সারেন। সরাসরি বিজেপি নয়, দলের কয়েকজন নেতার উদ্যোগে তৈরি ‘খোলা হাওয়া’ সংগঠন আয়োজন করে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক আলোচনাচক্র। সেখানেই হাজির হয়েছিলেন উপাচার্যরা। বিজেপি তথা ওই সংগঠনের নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডার দাবি, বৈঠকে কয়েক জন রেজিস্ট্রারও হাজির ছিলেন। তবে কারা ছিলেন বৈঠকে তা খোলসা করতে চাননি শঙ্কুদেব। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ শুরু হয় আলোচনাচক্র। জানা গিয়েছে, সেখানে হাজির ছিলেন বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শান্তা দত্ত, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুশান্ত চক্রবর্তী। এর পরেই ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে আলোচনায় হাজির উপাচার্যদের ‘ক্রীতদাস’ বলে তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
কলকাতার একটি হোটেলে উচ্চশিক্ষা নিয়ে আলোচনা চক্রে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। —নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার কলকাতায় ধর্মেন্দ্র এসেছিলেন মূলত দলীয় কর্মসূচিতে। কলকাতা দক্ষিণ এবং যাদবপুর জেলা বিজেপির বৈঠকে যোগ দেন। এর পরে কলকাতায় ‘আমার দেশ, আমার মাটি’ কর্মসূচিতেও অংশ নেন। এর পরেই সন্ধ্যায় আলিপুর রোডের হোটেলে হয় শিক্ষাক্ষেত্রের বিশিষ্টদের সঙ্গে আলোচনাচক্র। সেখানে রাজ্যের কয়েকজন প্রাক্তন উপাচার্য এবং ১০ জন বর্তমান রেজিস্ট্রারও হাজির ছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে। এই বৈঠকের কথা জানার পরে ব্রাত্য এক্স হ্যান্ডেলে তোপ দেগেছেন। আক্রমণ করেছেন রাজ্যপাল বোসকেও। তিনি লিখেছেন, “রাজ্যের অনুদানপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ক্রীতদাস উপাচার্য যাঁদের ‘স্বীকৃতি’ দিয়েছেন মিস্টার বন্ড বা (বা স্বপন কুমারের দীপক চট্টোপাধ্যায়) বিজেপির এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আশা করছি, মহামান্য আদালত বিষয়টি দেখছে।”
একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার তথা উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে রাজ্যপাল আলোচনাই করেননি বলে অভিযোগ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যের। গত শুক্রবার ব্রাত্য রেজিস্ট্রারদের একটি বৈঠকে ডাকলেও সেখানে হাজির হননি অনেকে। এ নিয়ে রাজ্যপাল বোস এবং শিক্ষামন্ত্রী বোসের আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ ব্যক্তিগত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। যার জেরে গত শনিবার মধ্যরাতের একটু আগে নবান্ন ও দিল্লিতে জোড়া চিঠি পাঠান বোস। ‘গোপনীয়’ সেই চিঠির বিষয় এখনও স্পষ্ট হয়নি। বিদেশযাত্রার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই চিঠির বিষয় নিয়ে ‘ব্যক্তিগত ও গোপনীয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। অন্য দিকে, দিল্লির চিঠি ঠিক কার উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে তা এখনও অস্পষ্ট। তবে অনেকের ধারণা কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীকে কোনও চিঠি দিয়ে থাকতে পারেন রাজ্যপাল। এমন আবহেই কলকাতায় উপাচার্য, রেজিস্ট্রারদের নিয়ে ধর্মেন্দ্রর বৈঠক নতুন বিতর্ক তৈরি করল।