বৃহস্পতিবার বগটুই যায় বিজেপি-র কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। নিজস্ব চিত্র
রামপুরহাটের বগটুই গ্রাম বৃহস্পতিবার ঘুরে দিল্লি ফিরে গিয়েছে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। শুক্রবার থেকেই শুরু হয়েছে তার রিপোর্ট তৈরি। তবে সেই রিপোর্টে শুধু বগটুই-কাণ্ডই নয়, সেই সঙ্গে রাজ্যের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চায় বিজেপি।
ওই কমিটির অন্যতম সদস্য তথা রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘গ্রামে গিয়ে আমরা যা দেখেছি, শুনেছি, গ্রামের মানুষের কাছ থেকে যা জেনেছি, সে সব তো রিপোর্টে থাকবেই, তার সঙ্গে রাজ্যের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিই যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে সে উল্লেখও থাকবে।’’ কমিটির অন্য সদস্য ভারতী ঘোষ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘ঘটনস্থলে গিয়ে একটা বিষয় স্পষ্ট দেখা গিয়েছে যে, মুহূর্তের মধ্যে বাড়িগুলিতে অগ্নিসংযোগ হয়নি। রাস্তার ডান দিকে, বাঁ দিকে এবং মাঠের ভিতরের বাড়িতেও আগুন লেগেছে। অনেক ক্ষণ ধরে হামলা চলেছে। এটা পুলিশের গাফিলতি শুধু নয়, পুলিশও সমান দোষী।’’
মঙ্গলবার বগটুইয়ের ঘটনা জানার পরেই রাজ্য বিজেপি কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি তোলে। সে দিনই দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করে দেন। সেই কমিটিতে সুকান্তের পাশাপাশি রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশ কর্তা তথা আইপিএস ভারতী ঘোষ। উল্লেখযোগ্য ভাবে দলে থাকা বাকি তিন সদস্যও প্রাক্তন আইপিএস অফিসার। রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন ডিজিপি তথা রাজ্যসভার সাংসদ ব্রজলাল, মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তথা সাংসদ সত্যপাল সিংহ এবং কর্নাটকের প্রাক্তন আইজি কে সি রামমূর্তি। বুধবার রাতে কলকাতায় আসা তিন সাংসদকে নিয়ে বৃহস্পতিবার বগটুই যান সুকান্ত, ভারতীরা।
বৃহস্পতিবার বগটুইয়ের পথে সাঁইথিয়ায় বাধার মুখে পড়ে বিজেপি-র প্রতিনিধি দল। সুকান্ত জানিয়েছেন, সেই বাধার কথাও থাকবে রিপোর্টে। জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে নড্ডাকে রিপোর্ট জমা দেওয়া হলেও পরে তা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে যাবে। সুকান্ত বলেন, ‘‘পাঁচ জনের দলে চার জন বিভিন্ন রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা প্রাক্তন পুলিশ কর্তা। তাঁদের যে ভাবে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে সেটা রাজ্যের সার্বিক আইনশৃঙ্খলার অবনতির নিদর্শন। রিপোর্টে সে কথারও উল্লেখ থাকবে। তবে মূল বিষয়টা থাকবে বগটুইয়ের ঘটনা। সেখানে গিয়ে আমরা যা দেখেছি এবং শুনেছি তাতে পুলিশের ব্যর্থতার জন্যই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। সেই সঙ্গে তৃণমূলের স্বার্থসর্বস্ব গোষ্ঠী রাজনীতির জেরেই এই হত্যাকাণ্ড।’’
পুলিশের গাফিলতির দিকে আঙুল তুলছেন ভারতীও। তিনি নিজের কর্মজীবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘মাওবাদীদের দেহ উদ্ধার হলে আমরা সবার আগে ডিএনএ পরীক্ষা করে পরিচয় জানতাম। বগটুইয়ে পুলিশ কিছুই করেনি। এমনকি ময়নাতদন্ত ছাড়াই দেহগুলি কবর দিয়ে দিয়েছে।’’ ভারতীর দাবি, বগটুইয়ে অনেককে প্রথমে কুপিয়ে খুন করে পরে আগুন দেওয়া হয়। আগুন লাগাতে বোমা এবং পেট্রল ব্যবহার করা হয়েছে বলেও মনে করেন ভারতী।
মঙ্গলবার সুকান্ত জানিয়েছিলেন, বিজেপি কেন্দ্রীয় দলের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও একটি দল গঠন করে রাজ্যে পাঠাতে পারে। তবে আদালত বগটুই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আলাদা করে আর কোনও দল পাঠাবে না বলেই মনে করছেন তিনি। শুক্রবার সুকান্ত বলেন, ‘‘বাংলার পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। কেন্দ্র চাইছে এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। আমরাও সেই অপেক্ষায় রয়েছি।’’