কেরলে সিপিএমের মহিলা সংগঠনের জাতীয় সম্মেলনে প্রয়াত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছবি দিয়ে হোডিংয়ের ব্যবহার করা হয়েছে। ছবি টুইটার থেকে নেওয়া
সিপিএমের শাখা সংগঠনের হোর্ডিংয়ে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ছবি ঘিরে জমে উঠেছে বিতর্ক। বিজেপি এতে ‘দেশদ্রোহিতা’-র ছায়া দেখছে। আর কংগ্রেস দেখছে দেশের থেকে বিদেশের প্রতি কমিউনিস্টদের ‘চিরকালীন প্রীতির ট্র্যাডিশন’। সিপিএমের অভিযুক্ত নারী সংগঠন অবশ্য দুই সমালোচনাই ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিল। দিল নিজেদের ব্যাখ্যাও।
কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে চলছে সিপিএমের নারী সংগঠন ‘সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি’-র জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলন উপলক্ষে তুলে ধরা হয়েছে দেশবিদেশের বহু কৃতী নারী এবং তাঁদের সাফল্য ও কর্মকাণ্ডকে। সম্মেলনের তেমনই একটি হোর্ডিংয়ে রয়েছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত বেনজির ভুট্টো। সেই হোর্ডিং নিয়েই দানা বেঁধেছে বিতর্ক।
শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে চার দিন ব্যাপী এই সম্মেলন। সম্মেলন শুরুর আগেই, গত বৃহস্পতিবার ছবিটি সামনে এনে আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। ছবিটি টুইট করে কেরল বিজেপির মুখপাত্র সন্দীপ বাচস্পতি লিখেছেন, ‘‘এটা পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছবি, যিনি ভারতের বিরুদ্ধে ১,০০০ বছরের যুদ্ধের ঘোষণা করেছিলেন, বর্তমানে সিপিএমের মহিলা সংগঠনের জাতীয় সম্মেলেন এই ধরনের হোর্ডিং দেখা যাচ্ছে। বিশ্বাসঘাতক ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।’’
টুইটটি তিনি সিপিএমের কেরল শাখাকে ট্যাগ করে দিয়েছেন। যে হোর্ডিংয়ে বেনজিরের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে লেখা হয়েছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী তিনি। তাঁকে যে জীবিতকালে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়-সহ পৃথিবীর ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় সাম্মানিক ডিলিট প্রদান করেছিল, তারও উল্লেখ করা হয়েছে।
কেরল বিজেপির অভিযোগ বেনজির পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কাশ্মীরে গণহত্যা হয়েছিল। তাঁর উস্কানিমূলক ভাষণের জেরেই ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদ ইন্ধন পেয়েছিল। এ ছাড়াও তাঁর বাবা প্রয়াত জুলফিকার আলি ভুট্টোর ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, ভারত ভেঙে টুকরো টুকরো করার হুঙ্কারের প্রসঙ্গও তুলে ধরেছে বিজেপি।
সিপিএমের মহিলা সংগঠনের ব্যাখ্যা, ১৩তম সম্মেলন উপলক্ষে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জন্য সংগ্রাম এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যাঁরা উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রেখেছেন, শহিদ হয়েছেন, সম্মেলনে তাঁদের ছবি দিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে যেমন বেনজির ভুট্টোর ছবি আছে, তেমনই তেলঙ্গানার কৃষক আন্দোলন, কেরলের পুন্নপ্রা-ভায়লর আন্দোলনের মহিলা সৈনিকদেরও ছবি রয়েছে। ফলে ভারত ছেড়ে শুধুমাত্র বিদেশি বা পাকিস্তানের কারও ছবি দেওয়া হয়েছে এমনটা নয়। এটা পুরোপুরি বিজেপির অপপ্রচার। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সিএম সুজাতা বলেন, ‘‘বিজেপির সঙ্গে একমত না হলেই ওরা তাদের দেশদ্রোহী বলে। আমরা যা করেছি তার সঙ্গে দেশদ্রোহিতার কোনও সম্পর্ক নেই। বিজেপি তাঁদের স্বার্থে যেমন খুশি প্রচার করছে।’’
কংগ্রেস এ নিয়ে আবার ভিন্ন আপত্তি তুলেছে। তাদের প্রশ্ন, পাকিস্তানের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রীকে তুলে ধরা হল, কিন্তু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বাদ দেওয়া হল কেন? কোনও নেতানেত্রীর নাম না করে কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘আমরা ছাত্রাবস্থায় বলতাম রাশিয়ায় বিপ্লব হলে, বাংলার সিপিএম ছাতা ধরে। ওদের দলের নীতিই হয়তো এমন। কারণ ওরা জাতীয়তাবাদীর থেকে অনেক বেশি আন্তর্জাতিকতাবাদী। ইন্দিরা গান্ধীকে তো সারা বিশ্ব মান্যতা দিয়েছেন। এখনও সিপিএম দল সেই মান্যতা দিতে পারল না। হয়তো ওরা জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে না বলেই এমনটা করেছে।’’
তবে এ প্রসঙ্গে কেরল সিপিএমের ব্যাখ্যা, দক্ষিণের ওই রাজ্যে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক একেবারে অহি-নকুল। তার ফলে ইন্দিরা বা অন্য কোনও কংগ্রেস নেতানেত্রীর ছবি তারা ব্যবহার করে না।
প্রসঙ্গত, কিউবা বিপ্লবের অন্যতম নায়ক এবং বামপন্থীদের অন্যতম ‘আইকন’ চে গ্যেভারার মেয়ে আলেইদাও কেরলের এই জাতীয় মহিলা সম্মেলনে অংশ নিতে এসেছেন আমন্ত্রিত প্রতিনিধি হয়ে।