শিবরাম দাস (পতাকা হাতে)। নিজস্ব চিত্র
আশ্বাসবাণী শুনিয়েছিলেন খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতেও শেষ রক্ষা হল না। মমতার ঘাটাল জেলা সফরের ঠিক আগে ঘাসফুলের ঘর ভেঙেই রামজীবনপুর পুরসভা দখল প্রায় নিশ্চিত করল গেরুয়া শিবির।
মঙ্গলবার রামজীবনপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বর্তমান কাউন্সিলর শিবরাম দাস তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। এর ফলে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ১১ আসন বিশিষ্ট এই পুরসভার সমীকরণ দাঁড়াল—বিজেপি ৬, তৃণমূল ৪ ও নির্দল ১। ২০১৫ সালের পুরভোটে তৃণমূলের সঙ্গে লড়েছিল বিজেপির নেতৃত্বাধীন মহজোট। সেই জোটে বাম, কংগ্রেস-সহ তৃণমূল বিরোধী প্রধান সবকটি দলই ছিল। ভোটের ফলে মহাজোট ৬টি আসন পেয়ে এগিয়েছিল। তৃণমূল পেয়েছিল ৫টি আসন। তবে শেষে মহাজোট থেকে এক নির্দল কাউন্সিলরকে ভাঙিয়ে পুরবোর্ডের দখল নিয়েছিল তৃণমূল।
গত এক বছর ধরে রামজীবনপুরের দখল নিয়ে তুমুল দড়ি টানাটানি চলেছে তৃণমূল-বিজেপির। পুরবোর্ড দখলে মরিয়া বিজেপি তৃণমূলের এক কাউন্সিলরকে ভাঙিয়েও নিয়েছিল। দু-দু’বার অনাস্থাও এনেছিল পদ্ম-শিবির। কিন্তু শেষমেশ পুরবোর্ড দখল আর হয়নি।
স্থায়ীকরণ-সহ সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা চালুর দাবিতে এ দিনই রামজীবনপুর পুরসভায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন অস্থায়ী কর্মীরা। এঁদের বেশিরভাগই সাফাই কর্মী। পুরভবনের গেট আটকে বিক্ষোভ দেখানোয় পুরসভার কাজকর্মও ব্যাহত হয়। কর্মচারীদের অভিযোগ, দিনে দশ ঘণ্টা খাটিয়েও ন্যূনতম মজুরি দেওয়া হয় না। পুর- চেয়ারম্যান নির্মল চৌধুরী বলেন, ‘‘বহুদিনের সমস্যা। সরকারকে জানিয়েছে।’’
গত ১৮ জুন কলকাতায় তৃণমূলের এক বৈঠকে দলনেত্রী মমতা জানিয়েছিলেন, রামজীবনপুরে নির্দল কাউন্সিলর তৃণমূলকে সমর্থন করবে। পুরবোর্ড তাঁদের দখলেই থাকবে। কিন্তু সেই অঙ্ক টিকল না। উল্টে নিজের ঘরই অটুট রাখতে পারল না শাসকদল। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যাসাগরের জন্মের দু’শো বছরের অনুষ্ঠানে ঘাটালের বীরসিংহ গ্রামে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর সেই সফরের আগে রামজীবনপুর দখল করে গেরুয়া শিবির জোরাল বার্তা দিল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এ দিন বিজেপির প্রবীণ নেতা তথা কাউন্সিলর গোবিন্দ মুখোপাধ্যায় দলত্যাগী শিবরামের হাতে গেরুয়া পতাকা তুলে দেন। গোবিন্দ বলেন, “এ বার বোর্ড দখল করে শহরের উন্নয়নের কর্মকাণ্ড শুরু হবে। পাশাপাশি তৃণমূল বোর্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তও শুরু করা হবে।” প্রায় একই সুরে শিবরামও বলছেন, “তৃণমূল বোর্ডে ব্যাপক দুর্নীতি চলছে। শহরের উন্নয়নের স্বার্থে আমি বিজেপিতে এলাম।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির জবাব, “এ রকম কেউ কেউ অতিলোভে চলে যেতে পারে। আমরা নজরে রাখছি। একজন যাবে, চারজন আমাদের দলে ফিরে আসবে।” আর রামজীবনপুর পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান নির্মল চৌধুরীর বক্তব্য, “দলের এক কাউন্সিলর বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সময়েই সব কিছু পরিষ্কার হবে।”
রামজীবনপুরে পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনবে বিজেপি। নিয়মানুযায়ী, বিজেপির ৬ কাউন্সিলরকে মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন করতে হবে। তারপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুরসভায় অনাস্থা নিয়ে ভোটাভুটি হবে। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে বিজেপিকে। সেই অঙ্ক শেষমেশ সফল হয় কি না, তাকিয়ে গোটা জেলাই।