সময় থাকতেই ভাবনা শুরু গেরুয়া শিবিরের। — ফাইল চিত্র।
হিন্দুত্বের হাওয়াতেই হবে আগামী লোকসভা নির্বাচন। বিজেপি যতই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নিরিখে ভোট চাওয়ার কথা বলুক, আসলে ভোটের মুখে রাম নামেই ভরসা রাখতে চায় গেরুয়া শিবির। সেটা পশ্চিমবঙ্গেও। ঠিক সময়ে লোকসভা নির্বাচন হলে তার মধ্যেই পড়বে রামনবমী তিথি। আর সেই তিথিতে অতীতের তুলনায় বড় শক্তি প্রদর্শনের ভাবনা শুরু করে দিয়েছে রাজ্য বিজেপি। সম্প্রতি দলের এক সাংগঠনিক বৈঠকে সে কথা উত্থাপন করেছেন স্বয়ং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ওই বৈঠকে উপস্থিত এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের সময়ে যে রামনবমী তিথি পড়ছে, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শুভেন্দুদা বলেন, বিভিন্ন সংগঠন যে সব সভা, মিছিল করবে তাতে দলের কর্মী, সমর্থকদের যোগদান বাড়াতে হবে। গোটা রাজ্যে এক কোটি মানুষের যোগদান চাই।’’
শুধু বাংলাতেই নয়, গোটা দেশেই এ বার রাম নামের আবহ থাকবে লোকসভা নির্বাচনে। ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হবে। সেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উপস্থিত থাকবেন। ইতিমধ্যেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-সহ বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাজ্য জুড়ে অযোধ্যার অনুষ্ঠানের প্রচার পরিকল্পনা তৈরি করছে। জানুয়ারি মাসের প্রথম ১৫ দিন চলবে আমন্ত্রণ পর্ব। বাংলা থেকেও কর্মী, সমর্থকদের উদ্বোধনের দিনে অযোধ্যায় নিয়ে যেতে চায় সঙ্ঘ পরিবার। উদ্বোধনের পরে বিভিন্ন রাজ্য থেকে সংগঠিত ভাবে অযোধ্যায় দর্শনার্থী নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। তাঁদের যেতে বলা হবে ২৭ জানুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। গেরুয়া শিবিরের বাংলার নেতারা ঠিক করেছেন, অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের দিনে রাজ্যে বিশেষ দীপাবলি পালনের অনুরোধ করা হবে। বাড়িতে বাড়িতে প্রদীপ জ্বালানোর সঙ্গে স্থানীয় মন্দিরে জমায়েতেরও উদ্যোগ নেবে গেরুয়া শিবির।
এই পরিকল্পনা গোটা দেশের হলেও রাজ্যে আলাদা করে রামনবমী নিয়েও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আসলে গেরুয়া শিবির রাজ্যে ধারাবাহিক ভাবে হিন্দুত্বের আবহ তৈরি করতে চাইছে। ২৪ ডিসেম্বর মোদীর উপস্থিতিতে কলকাতায় ব্রিগেডে লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠের পরেই জানুয়ারিতে অযোধ্যাকে কেন্দ্র করে ‘উৎসব’ কর্মসূচি। আর তার পরেই লোকসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। এরই মধ্যে ১৭ এপ্রিল রামনবমী। সেই দিনটাও রাজ্যে ধুমধাম করে পালন করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। আড়াল থেকে বিজেপিও।
প্রসঙ্গত, ইদানীং রাজ্যে রামনবমী পালনের রেওয়াজে বেড়েছে। মূলত গেরুয়া শিবিরের উদ্যোগেই জেলায় জেলায় মিছিল, শোভাযাত্রা বার হয়। শেষ বার সেই মিছিল ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনাও দেখা যায় কয়েকটি জায়গায়। অনেক জায়গায় পুলিশ মিছিলের অনুমতি না দিলে তা নিয়ে শাসক তৃণমূলের সঙ্গে সংঘাতের পথে হাঁটে বিজেপি। তবে গেরুয়া শিবিরের আশা আগামী বছর রামনবমীর সময়ে নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেলে রাজ্য প্রশাসন থাকবে কমিশনের নিয়ন্ত্রণাধীন। সে কথা মাথায় রেখেই রাজ্যে বড় মাপের রামনবমী পালনের ভাবনা গেরুয়া শিবিরের।