TMC

রাজ্যে জঙ্গিযোগ নিয়ে তরজায় শাসক-বিরোধী

সিপিএম এবং কংগ্রেস অবশ্য সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যে পুলিশ-প্রশাসনের ‘শিথিল’ ভূমিকার দিকে আঙুল তুলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৩৯
Share:

প্রতীকী ছবি.

মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে আল কায়দা জঙ্গি সন্দেহে ৬ জনের ধরা পড়ার ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলেছে। বিজেপি প্রত্যাশিতভাবেই রাজ্যের তৃণমূল সরকারের দিকে আঙুল তুলেছে। নির্বাচনের মুখে এই ঘটনাকে সামনে রেখে রাজ্যকে ‘সন্ত্রাসবাদের আতুঁড়ঘর’ বলে চিহ্নিত করেছে তারা। পাশাপাশি ধৃতদের ধর্মীয় পরিচিতিকে সামনে এনে আঙুল তোলা হয়েছে রাজ্যের শাসকদলের ‘তোষণকারী’ ভূমিকার দিকেও। তৃণমূলের পাল্টা বক্তব্য, এই ধরনের জঙ্গি কাজকর্ম সীমান্তের সুরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত। কেন্দ্র সে দায় এড়াতে পারে না।

Advertisement

সিপিএম এবং কংগ্রেস অবশ্য সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যে পুলিশ-প্রশাসনের ‘শিথিল’ ভূমিকার দিকে আঙুল তুলেছে। তাদের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। একই সঙ্গে ধৃতদের ধর্মীয় পরিচয়কে ব্যবহার করে বিজেপির রাজনীতিরও বিরোধিতা করেছে তারা। উভয়েরই বক্তব্য, বিষয়টিকে বিজেপি যেভাবে রাজনীতির উপাদান করে রাজ্যকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে তা মেনে নেওয়া যায় না।

বিজেপির দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এদিন বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। পশ্চিমবঙ্গে সারা দেশ দুনিয়ার জঙ্গিরা ধরা পড়ছে। সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হয়ে গেছে। কালিয়াচক, ধূলাগড়, খাগড়াগড়, নৈহাটি কোথাও তদন্ত হয়নি। সরকারি নির্দেশে চেপে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল।’’ এই প্রসঙ্গেই তিনি দুই অবিজেপি রাজ্য কেরল ও বাংলাকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘‘কেরল ও বাংলার রাজ্যের প্রতিনিধিরা লোকসভায় সব থেকে বেশি চেঁচান কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। সব থেকে বেশি দেশবিরোধী কাজ হয় কেরল ও বাংলায়। অনুপ্রবেশকারী ভোটের স্বার্থে এখানে কাঁটাতারের বেড়াও দেওয়া হয়নি।’’ একই অভিযোগ করেছেন রাজ্য দলের ভারপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীও। এই অভিযোগকে রাজনৈতিক প্রচার হিসেবে চিহ্নিত করেছে তৃণমূল। জঙ্গি কার্যকলাপ বন্ধের দায় কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেই ঠেলেছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার সম্পর্ক নেই। জঙ্গিরা তো ঢোকে সীমান্ত দিয়ে। তা বিএসএফের হাতে। বিএসএফ কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। সেনা ইন্টেলিজেন্স, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য পেলে রাজ্য পদক্ষেপ করত।’’

Advertisement

বারবার এ রাজ্যের জঙ্গিযোগ সামনে আসায় রাজ্য পুলিশের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘একের পর এক ঘটনায় প্রমাণ হচ্ছে যে আমাদের যে গোয়েন্দা কাজকর্ম তা দূর্বল থেকে দূর্বলতর হচ্ছে। তৃণমূলকে বাঁচানোই এখন রাজ্যে পুলিশের একমাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ তবে এই ধরনের জঙ্গি কার্যকলাপ চলার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি ঘুরিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দিকেও আঙুল তুলে বলেন, ‘‘ভারতের রাজনীতিতে কিন্তু একটা সাম্প্রদায়িকীকরণ হচ্ছে। তাতে যে বার্তা যাচ্ছে তা শুভবার্তা নয়। জঙ্গি সংগঠনগুলি এইধরনের সরকারি সিদ্ধান্তকে ব্যবহার করে দরিদ্র, নিরীহ, অশিক্ষিতদের মধ্যে নিজেদের প্রসার ঘটায়।’’ বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কিছুদিন আগে হুগলির একটি মেয়ে ধরা পড়েছিল। বিদেশে বসে জঙ্গি কাজকর্ম করছিল। তারপর এই ঘটনা উদ্বেগজনক। সন্ত্রাসবাদী কাজে যুক্তদের বিচার হোক তবে নির্দোষ কাউকে যেন ফাঁসানো না হয়।’’ সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘জঙ্গিরা জঙ্গিই। তাদের ধর্ম, জাত নিয়ে উন্মাদনা তৈরি করা ঠিক হবে না। মনে রাখতে হবে, সমঝোতা এক্সপ্রেস ও গেরুয়া সন্ত্রাসও আমরা দেখেছি।’’

এক বছরে রাজ্যে ধৃত

• ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০: নাজমুস সাকিব, আবু সুফিয়ান, মইনুল মণ্ডল, লিউ ইয়ান আহমেদ, আল মামুন কামাল এবং আতিউর রহমান (আল কায়দা)**
• ৮ জুন,২০২০: শেখ রেজাউল ওরফে কিরণ (জেএমবি)
• ২৮ মে,২০২০: আবদুল করিম ওরফে বড় করিম(জেএমবি)
• ১৯ মার্চ, ২০২০: তানিয়া পারভীন (লস্কর-ই-তইবা)*
• ১৬ ডিসেম্বর,২০১৯: মোশারেফ হোসেন (জেএমবি)**
• ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯: আব্দুল রহমান (জেএমবি)
• ১০ সেপ্টেম্বর,২০১৯: আসাদুল্লা শেখ ওরফে রাজা (জেএমবি)
• ৩সেপ্টেম্বর,২০১৯: আব্দুল বারি এবং নিজামুদ্দিন খান (জেএমবি)
• ২সেপ্টেম্বর,২০১৯: মহম্মদ আব্দুল কাশেম (জেএমবি)
• ২৬ অগস্ট,২০১৯: ইজাজ আহমেদ (জেএমবি)
• ২৪ জুন, ২০১৯: মহম্মদ জিয়াউর রহমান,মামিনুর রশিদ,মহম্মদ শাহীন
আলম এবং রবিউল ইসলাম (জেএমবি)


* রাজ্য পুলিশের এসটিএফের হাতে গ্রেফতার
** এনআইএর হাতে গ্রেফতার, বাকি সব কলকাতা পুলিশের এসটিএফের হাতে গ্রেফতার
বন্ধনীতে সংগঠনের নাম

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement