ফাইল ছবি
এক দিকে গরু পাচার মামলায় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের নানা অভিযোগ। অন্য দিকে, ওই মামলাতেই ধৃত, তাঁর দেহরক্ষী সেহগাল হোসেনকে হেফাজতে নিতে ইডি-র তোড়জোড়। দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার সাঁড়াশি চাপে অনুব্রতর আশু জামিনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। বীরভূম জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ‘কেষ্টদার’ এই অনুপস্থিতি কী ভাবে সামলানো যাবে তা নিয়ে চিন্তায় তাঁরা।
জেলা তৃণমূলের নেতাদের একাংশ জানাচ্ছেন, তাঁরা জানতে পেরেছেন চার্জশিটে মোট ২৬ জনের গোপন জবানবন্দি জমা দিয়েছে সিবিআই। অনুব্রতকে গরু পাচার মামলায় অন্যতম প্রধান চক্রান্তকারী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে চার্জশিটে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড়ের জন্য অনুব্রতর আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ লোকজন, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি আধিকারিক, ব্যাঙ্ক আধিকারিক থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার— অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জেলার এক নেতা বলছেন, ‘‘আমাদের চিন্তা জেরার মুখে কে কী বলেছেন সেটাই। যে ২৬ জনের জবানবন্দি দেওয়া হয়েছে সেটা তো নিশ্চয় অভিযুক্তকে দোষী হিসাবে দেখানোর জন্যই।’’
আইনজীবীদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, সিবিআইয়ের কাছে জবানবন্দি দেওয়া আর বিচারের সময় আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া এক বিষয় নয়। কিন্তু দলের দুশ্চিন্তা তাতে থামছে না। কালীপুজোর পরেই পঞ্চায়েত ভোটের তোড়জোড় শুরু হয়ে যাবে। সে সময় অনুব্রতর অনুপস্থিতিতে কীভাবে প্রস্তুতি সামাল দেওয়া যাবে তা নিয়েই চিন্তায় নেতারা। এক নেতার কথায়, ‘‘কেষ্টদার কথাতেই সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হত। এ বার কেষ্টদা না থাকলে কার নির্দেশ মানতে হবে, সব স্তরের নেতারা তা মানবেন কি না তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।’’
তৃণমূল নেতাদের চিন্তা আরও বাড়িয়েছে আর এক কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) সক্রিয়তা। ইতিমধ্যেই গরু পাচার মামলায় ধৃত সেহগাল হোসেনকে হেফাজতে নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে ইডি। কান টানলে মাথা আসবে না তো, ভাবাচ্ছে সেটাই। জেলা তৃণমূলের অন্দরের খবর, সেহগালকে হেফাজতে চেয়ে ইডির আবেদন আসানসোল আদালতে আপাতত খারিজ হয়ে গেলেও তা আগামী দিনে নাও হতে পারে। একবার সেহগালকে হেফাজতে পেয়ে দিল্লি নিয়ে যেতে পারলে ওই মামলায় অনুব্রতকেও যুক্ত করা হতে পারে, নেতাদের আশঙ্কা।
আসানসোল জেল সূত্রেও দাবি, প্রাক্তন দেহরক্ষী তথা জেলে তাঁর প্রতিবেশী সেহগালকে শুক্রবার ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি নিয়ে কিছুটা চিন্তিত দেখিয়েছে কেষ্টকে। সেহগালকে ইডি হেফাজতে পেল কি না, সে নিয়েও তাঁর আগ্রহ দেখা গিয়েছে। জেলের রক্ষীদের সূত্রের দাবি, শুক্রবার ইডি-র কাছে সেহগাল গ্রেফতারের নোটিস নিয়েছেন শুনে বিরক্তি প্রকাশ করেন অনুব্রত। আইনজীবীর পরামর্শ ছাড়া এমন আর না করার পরামর্শও দেন বলে দাবি।
শুক্রবার আসানসোল জেলা আদালতের অবসরকালীন এজলাসে তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমার খবর টিভিতে দেখেন অনুব্রত। দুপুরে সিবিআই আধিকারিকেরা জেলে গিয়ে সরকারি ভাবে তাঁকে চার্জশিট জমার কথা জানান। শনিবার জেলের আধিকারিকদের কাছে সংবাদপত্র চেয়ে খুঁটিয়ে পড়েছেন কেষ্ট।