অ্যাসিড হামলার ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। প্রতীকী ছবি।
জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার আগে অ্যাসিড হামলায় জখম হয়েছে তার ডান হাত। তা বলে দমে যায়নি সে। হাসপাতালের শয্যায় ‘রাইটার’ বা লেখক নিয়েই আজ, বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে বীরভূমের ওই নাবালিকা।
অ্যাসিড হামলার ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। পরীক্ষার্থীর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ওই নাবালিকার উদ্দেশে লেখা ‘হামলাকারী’র ‘হুমকি-চিঠি’ও পুলিশ হাতে পেয়েছে। অভিযোগের তির মেয়েটিরই এক নাবালক সহপাঠীর দিকে। পুলিশ তাদের স্কুলে গিয়ে প্রাথমিক খোঁজখবর নিয়েছে।
নলহাটি থানা এলাকার একটি হাই স্কুলের ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নাবালিকার দাবি, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি গ্রামের বাসিন্দা, তারই সহপাঠী তার বাড়ির সামনে এসে তাকে ডাকে। নাবালিকা তখন প্রস্তুতি নিচ্ছিল পরীক্ষার। তার অভিযোগ, ‘‘বাইরে বেরিয়ে আসতেই বন্ধু আমাকে বলে, ‘তোর জন্য একটা গিফট এনেছিলাম’। আমি নেওয়ার জন্য ডান হাত বাড়াতেই ও একটি কৌটো বার করে আমার হাতে অ্যাসিড ঢেলে দেয়। আমার হাত জ্বালা করতে থাকে।’’ আক্রান্ত ছাত্রীর আরও দাবি, কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছেলেটি একটি চিঠি ফেলে দিয়ে দূরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মোটরবাইকে অন্য এক জনের সঙ্গে পালিয়ে যায়।
এর পরেই পরীক্ষার্থীটি বাড়ির ভিতরে এসে মাকে ঘটনার কথা জানায়। বুধবার মা বলেন, ‘‘মেয়ের স্কুলের প্রধান শিক্ষককে সব জানাই। নলহাটি থানায় অভিযোগ দায়ের করি।’’ মেয়েটির ওই সহপাঠীর নাম পুলিশকে জানানো হয়েছে। মেয়েটির স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, কী ঘটেছে, পুলিশ তদন্ত করছে। তবে, তাঁরা পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে রাইটার দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। বৃহস্পতিবার রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে আক্রান্ত নাবালিকা পরীক্ষা দেবে।
মেয়ের পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্তে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে মায়ের। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়ের খুব মনের জোর। এ রকম হামলা হওয়ার পরেও ও জখম হাত নিয়েই পরীক্ষায় বসতে চেয়েছিল। আমি রাইটার নিয়ে পরীক্ষায় বসার জন্য ওকে রাজি করিয়েছি।’’
আর সাহসী সেই মেয়ের কথায়, ‘‘আমার মা আমাকে জীবনের অনেক ঝড়-ঝাপটা সামলে বড় করে তুলছে। জীবনের বড় পরীক্ষার জন্য অনেক দিন থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছি। এই পরীক্ষার উপরে ভর করে জীবনে এগিয়ে যেতে হবে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই নাবালিকাকে দেওয়া ‘হুমকি-চিঠি’তে লেখা রয়েছে, ‘তোর উপর হামলা না করলে তুই অনেক দূর চলে যেতিস। সেটা যাতে না হয় তার জন্য তোর উপর হামলা করা হল’। হুমকিতে অবশ্য ভয় পাচ্ছে না নাবালিকা। বলছে, ‘‘একটা হামলায় পিছিয়ে গিয়ে খারাপ ছেলেদের কাছে হার মানতে চাইনি। যন্ত্রণাকে দূর করে পরীক্ষায় বসতে চেয়েছি।’’