বিপ্লব মিত্র ও প্রশান্ত মিত্র।
এক বছরের দূরত্ব ঘুচিয়ে ‘ঘর ওয়াপসি’ হল দক্ষিণ দিনাজপুরের বর্ষীয়ান নেতা বিপ্লব মিত্রের। পুরনো নেতা দলে ফেরার পরে এ দিন লকডাউন বা দূরত্ববিধি ভুলে রীতিমতো উৎসব পালন করেন জেলার তৃণমূল সমর্থকেরা। বিপ্লবের ছবি দেওয়া ফ্লেক্স তো আগেই টাঙানো হয়েছিল। এ দিন দেদার বাজি-পটকাও ফেটেছে জেলা জুড়ে। কী ভাবে, কোথা থেকে এই পটকা এল, তা নিয়ে অবশ্য নিরুত্তর তৃণমূল। দাদার সঙ্গেই তৃণমূলে ফিরলেন প্রশান্ত মিত্রও। দু’জনই কলকাতার তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে গিয়ে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত থেকে দলীয় পতাকা নিলেন। মুকুল রায়ের একসময়কার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বিপ্লব ঘরে ফেরার পরে ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে দলের জয়ের সম্ভাবনা বাড়ল বলেই মনে করছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা।
গত বছর ২৫ জুন তৃণমূল ছেড়ে সপার্ষদ বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন বিপ্লব। দলের একাংশের বক্তব্য, সদ্য লোকসভা ভোটে হারের পরে অর্পিতা ঘোষের সঙ্গে দ্বন্দ্বেই দল ছেড়েছিলেন তিনি। বিপ্লবঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, বিজেপি যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল তাঁকে, তা পূরণ করেনি। তাই ধীরে ধীরে তিনি নিজেকে আড়ালে নিয়ে যান। এ দিন তৃণমূলে ফিরে তিনি বলেন, “সেই ১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরির পর থেকে শুধু দক্ষিণ দিনাজপুরই নয়, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে সেই দলে ফিরতে পেরে ভাল লাগছে।’’
লোকসভা ভোটের পরে বিপ্লব বিজেপিতে যাওয়ার পরের এক বছরে আত্রেয়ী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। জেলা তৃণমূলের লোকজনই বলছেন, তখন অর্পিতার অন্যতম সহযোগী সোনা পালের ডানা ছাঁটা হয় কিছু দিন আগে। জেলায় বৈঠক করতে আসেন তৎকালীন দলীয় পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকের পরেই সোনার গাড়ি থেকে নীল বাতি খোলা হয়। সংগঠনে উন্নতি হয় গঙ্গারামপুরের বিধায়ক, বিপ্লবঘনিষ্ঠ গৌতম দাসের। সেই গৌতমকে সম্প্রতি অর্পিতার জায়গায় জেলা সভাপতি করার পরে বিপ্লবের ঘরে ফেরা নিশ্চিত হয়ে যায়।
দলের একটি সূত্রের বক্তব্য, সম্প্রতি পিকে-র দলও ইঙ্গিত দিয়েছিল, বিপ্লবের মতো ভূমিপুত্র এবং সংগঠক থাকলে দলের জেলায় ভাল ফল করার সম্ভাবনা বাড়বে। জেলার রাজনৈতিক মহলেরও বক্তব্য, বিপ্লব অনেককে নিয়ে চলতে পারেন। তাঁর সঙ্গে জেলার সংখ্যালঘু তো বটেই, আদিবাসী সমাজেরও যোগ যথেষ্ট ভাল। অর্পিতা এ দিন বলেন, “বিপ্লবদা পুরনো নেতা। তবে এখন থেকে রাজ্যের নির্দেশিত পথেই জেলায় দল চলবে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে দল পরিচালনার দিন এখন আর নেই।’’ বিপ্লব জানান, তিনি সকলকে নিয়ে আগামী বিধানসভার ভোটে জেলার ৬টি আসন জয়ের লক্ষ্যে ঝাঁপাবেন।
বিজেপির জেলা সভাপতি বিনয় বর্মন বলেন, ‘‘বিপ্লববাবুর সঙ্গে দলের কোনও মনোমালিন্য ছিল না। তিনি ব্যক্তিগতভাবে অন্য দলে যোগ দিতেই পারেন। এতে বিজেপির কোনও ক্ষতি হবে না।’’