পাহাড়ে বন্ধের জেরে বন্ধ টয়ট্রেন। লাইন ঢেকেছে আগাছায়। তিনধারিয়ায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
কিছুটা খুলছে। কিছুটা বন্ধ। কোথাও মিছিলে ভিড় বাড়ছে। কোথাও গোলমালের ভয়ে জনজীবন থমথমে। এখনও পুরোপুরি চেনা ছন্দে ফেরেনি পাহাড়। কিন্তু পাহাড়কে স্বাভাবিক করার পথে তাঁরা যে অনেকটাই এগিয়েছেন, তা নবান্নের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিনয় তামাঙ্গ-অনীত থাপা জুটি। ফলে, পাহাড়ে দল ও প্রশাসনেও কর্তৃত্ব বেড়েছে মোর্চার নতুন জুটির। শনিবার কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেও সেই সুর ছিল। দার্জিলিঙে শান্তি ফিরছে বলে জানিয়ে দেন তিনি।
এ বার গুরুঙ্গকে পুরোপুরি কোণঠাসা করতে দিল্লিকে পাশে পেতেও মরিয়া মোর্চার আলোচনাপন্থী দুই শীর্ষ নেতা। বিনয়ের কথায়, ‘‘দিল্লিতে নানা স্তরে যোগাযোগ হয়েছে। দিন ক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি। তবে শীঘ্রই দিল্লি যাব।’’ বিনয়-অনীত শিবিরের নেতারা জানান, কলকাতায় গিয়েও সংশোধনাগারে বন্দি মোর্চা নেতা-কর্মীদের মুক্তির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে চান মোর্চার বিনয়-অনীতেরা। প্রথম দফায় পাহাড়ে দু’দিনের জন্য ইন্টারনেট চালুর আর্জিও জানাতে পারেন তাঁরা। তাতে মানুষ আর একটু স্বাচ্ছন্দ্য পাবেন। বিনয় শিবিরের একাধিক নেতা জানান, দু’দিনের প্রতিক্রিয়া দেখে তার পরে রাজ্য সিদ্ধান্ত নিক, নেট চালু রাখা হবে কি না।
কট্টরপন্থীরাও পাহাড়ে প্রভাব বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ দিনও কার্শিয়াঙের কাছে সিপাহিধুরায় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করেন বন্ধ সমর্থকেরা। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১৪ জনকে পুলিশ খুঁজছে। কালিম্পঙের স্কুল বাসে হামলা ও পরে পুলিশের গাড়িতে পাথর ফেলার ঘটনায় মোট ৩৩ জন গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁদের ১৪ দিনের জন্য জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিলিগুড়ি আদালত।
আরও পড়ুন:পাহাড়ে হামলা স্কুলগাড়িতে
অপরাধমূলক কাজকর্মে নবান্ন যে কড়া ব্যবস্থাই নেবে, তা এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেও পরিষ্কার। দার্জিলিঙের রায় ভিলা ভাঙচুরের প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুলিশ শক্ত হাতেই মোকাবিলা করবে। যারা এখন ইট পাটকেল ছুড়ছে, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।’’
শুভবুদ্ধি উদয়ের ডাক দিয়েই এ দিন কার্শিয়াঙে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা স্কুল-কলেজে পড়াশোনা স্বাভাবিক রাখার দাবিতে মিছিল করেন। তাতে সামিল হন অভিভাবকরাও। মিছিলকারীরা ‘গোর্খাল্যান্ডের দাবি জন্মগত অধিকার’-এর পাশাপাশি ‘পড়াশোনাও মৌলিক অধিকার’ বলে স্লোগান দেন। আলোচনাপন্থীদের ধারণা, এ ভাবে এগোলে আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
মিরিক অবশ্য এ দিনই ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। দোকানপাট, হোটেল খোলা ছিল। বাসও চলেছে। সরকারি গাড়ি যাতায়াত করেছে কালিম্পং ও দার্জিলিঙেও। রাস্তার ধারে হকাররা নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে বসেছেন। দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াঙে পড়ুয়ারা সাধারণ পোশাকে স্কুলেও গিয়েছে।