সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানে বক্তব্য রাখছেন বিমান বসু। নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্য রাজনীতিতে হারানো জমি কি পুনরুদ্ধারে নেমেছে বামেরা? রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির প্রতিবাদে সুর ক্রমশ চড়াচ্ছেন বিমান বসু, মহম্মদ সেলিমরা। শুক্রবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে (যেখানে ইডির দফতর) অভিযান করে বামেরা। ওই মঞ্চ থেকেই তৃণমূল সরকারকে রুখে লড়াইয়ের বার্তা দিলেন বিমান-সূর্যরা।
নিয়োগ দুর্নীতির প্রতিবাদে এই মঞ্চ থেকে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের উপর হামলা চালানো হচ্ছে সরকারি কায়দায়। যে কোনও গণতান্ত্রিক দেশে প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে। আমাদের শপথ নিতে হবে, গণতন্ত্রকে হত্যা করতে দেব না।’’ সিজিও কমপ্লেক্সে বামেদের অভিযান বানচাল করার ছক কষা হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বিমানের কথায়, ‘‘সভা বানচাল করতে পুলিশের লোকেরা দৌরাত্ম্য করেছে।’’
তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করেছেন সূর্যকান্ত মিশ্রও। দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছেন, ‘‘দুর্নীতিগ্রস্তরা জেলে যাবেন। তৃণমূলের যাঁদের ধরা হয়েছে, তাঁদের ছেড়ে দিতে কত ক্ষণ লাগবে জানি না। চোর ধরো, জেল ভরো করে শুধু হবে না। লুটের টাকা ফেরত দিতে হবে।’’ তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই বলেও বিঁধেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কে কখন তৃণমূলে, কে কখন বিজেপিতে, পার্থক্য করা যাবে না। সবাইকে একজোট হয়ে লড়তে হবে।’’ বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন করারও ডাক দিয়েছেন সূর্যকান্ত। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘকে (আরএসএস) মুখ্যমন্ত্রীর ‘এত খারাপ নয়’ মন্তব্য নিয়েও শুক্রবার সরব হন সূর্য। তিনি বলেন, ‘‘আরএসএস ওঁকে মা দুর্গা বলেছিল, আর উনি সার্টিফিকেট দিচ্ছেন।’’
গরু পাচার-কাণ্ডে ধৃত বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে ‘বীরের সম্মান দিয়ে’ ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গ টেনে অনুব্রতকে বিঁধে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘চোরের মতো এসেছেন, চোরের মতো গিয়েছেন। গত কাল মমতা যা বলেছেন, তাতে তৃণমূলের সম্বর্ধনা দেওয়া উচিত ছিল।’’ বস্তুত, মঙ্গলকোটের এক মামলায় শুক্রবার সকালে আসানসোল সংশোধনাগার থেকে বিধাননগরের ওই আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় অনুব্রতকে। পরে এই মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন কেষ্ট।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে সক্রিয় হয়েছে সিবিআই-ইডির মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডলের মতো শাসকদলের ‘প্রভাবশালী’ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। কয়লা পাচার-কাণ্ডে তদন্তকারী সংস্থার মুখোমুখি হয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রেক্ষাপটে দুর্নীতির অভিযোগকে খাড়া করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যে ভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি করছে, তা রাজনৈতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। ক’দিন আগে শহরে এসএফআই-এর কর্মসূচিতে জন সমাবেশ এই পর্বে বাড়তি নজর কেড়েছে। বামেদের একাংশের মতে, বিজেপিকে রুখে বিরোধী মঞ্চে ধীরে ধীরে গুরুত্ব বাড়ছে তাঁদের দলের। তবে এতে ‘আত্মতুষ্ট’ না হয়ে লড়াই চালানোর যে প্রয়োজন রয়েছে, সেই বার্তাই বার বার দেওয়ার চেষ্টা করছেন বিমান-সূর্যরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘সবাইকে একজোট হয়ে লড়তে হবে।’’