গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
দুই বিল নিয়ে সঙ্ঘাত চলছে বেশ কিছু দিন ধরেই। সে বিতর্কে নতুন মোড় এনে এ বার মমতা, মান্নান, সুজন-সহ সব পরিষদীয় নেতাকে রাজভবনে ডাকলেন রাজ্যপাল। তাঁদের নিয়ে বৈঠকেই স্থির হবে বিলের ভবিষ্যৎ, ইঙ্গিত রাজ্যপালের পাঠানো চিঠিতে। কে কে যোগ দেবেন সে বৈঠকে, আদৌ ক’জন যোগ দেবেন, তা নিয়ে সংশয় বিস্তর। কিন্তু বিল দু’টি নিয়ে যে সব প্রশ্ন রাজভবন তুলেছে, বিরোধী পক্ষও কিন্তু প্রায় একই সুরে সেই সব প্রশ্নেরই জবাব চাইছে।
আগামী ১৭ জানুয়ারি বৈঠক ডেকেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। যে দু’টি বিল নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সঙ্ঘাত চলছে, তার মধ্যে একটি বিল (পশ্চিমবঙ্গ গণপ্রহার প্রতিরোধ বিল ২০১৯) বিধানসভায় ইতিমধ্যেই পাশ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান এবং বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বিল পাশ করানোর প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ জানানোয় রাজ্যপাল আর সে বিলে সই করেননি। ফলে বিধানসভায় পাশ হওয়ার পরেও বিলটি আইনে রূপান্তরিত হতে পারেনি। আর ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য তফসিলি জাতি ও তফসিলি জনজাতি কমিশন বিল ২০১৯’ নামে দ্বিতীয় যে বিল নিয়ে সঙ্ঘাত, সেটি এখনও বিধানসভায় পেশই করতে পারেনি সরকার। বিল পেশের আগে রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য সেটি রাজভবনে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অনুমোদন এখনও মেলেনি।
রাজ্যপালের টেবিলে বার বার বিল আটকে যাওয়া নিয়ে নবান্ন এবং রাজভবনের সম্পর্ক এখন উত্তপ্ত। অভিসন্ধি নিয়ে অসহযোগিতা করা হচ্ছে সরকারের সঙ্গে— অভিযোগ করছেন রাজ্যের শাসকরা। আর রাজভবনও বার বার পাল্টা বিবৃতি দিয়ে জানাচ্ছে, রাজ্য সরকারই অসহযোগিতা করছে, তাই বিল ছাড়া যাচ্ছে না।
রাজ্যপাল সোমবার বোঝাতে চেয়েছেন, বিল দু’টি নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তা কাটাতে তিনি তৎপর। তৃণমূল পরিষদীয় দলনেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা আব্দুল মান্নান, বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী-সহ ৮ জনকে চিঠি দিয়ে বৈঠকে ডাকা হয়েছে জটিলতা কাটানোর পথ খুঁজতেই। রাজভবনের বিবৃতিতে এ দিন অন্তত তেমনই লেখা হয়েছে। কিন্তু বিল দু’টি আটকে থাকার কারণ হিসেবে রাজভবন কী জানাচ্ছে, তা এক বার দেখে নিন:
সরকার পক্ষ কিন্তু রাজভবনের এই সব ব্যাখ্যা নস্যাৎ করছে। আইন বহির্ভূত ভাবে রাজ্য সরকার কিছুই করেনি বলে নবান্নের তরফে বার বার দাবি করা হচ্ছে:
কিন্তু বিরোধী দলগুলি আবার সরকারের এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত নয়। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের প্রতিটি গতিবিধিকে যে কংগ্রেস এবং বামেরা সমর্থন করছে, এমন নয়। কিন্তু এই দু’টি বিল নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তাতে বিরোধী দলগুলির বয়ান রাজভবনের বয়ানের বেশ কাছাকাছি।
তা হলে কি রাজ্যপালের ডাকা বৈঠকে ১৭ জানুয়ারি হাজির হচ্ছে বিরোধী দলগুলো? বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান সোমবার বলেছেন, ‘‘আমি ১৭ জানুয়ারি কলকাতায় থাকছি না। ওই দিন আমার দিল্লিতে থাকার কথা। আগে থেকেই কর্মসূচি স্থির হয়ে রয়েছে।’’ তবে রাজ্যপাল যে ডেকেছেন, সে কথা তিনি কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বকে বলবেন বলে মান্নান এ দিন জানান। নেতৃত্ব যদি কর্মসূচিতে পরিবর্তন ঘটায়, তা হলে তিনি ওই দিন রাজভবনের বৈঠকে যাবেন, জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
তবে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী সোমবার জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি রাজ্যপালের ডাকা বৈঠকে যাচ্ছেন না। তিনিও ওই দিন কলকাতায় থাকছেন না বলে সুজন জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি যে বৈঠকে যেতে পারব না, সে কথা আমি রাজ্যপালকে নিজেই জানাব।’’
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি। রাজ্যপালের ডাকা বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদৌ যাবেন কি না, সে বিষয়ে কোনও ইঙ্গিত মেলেনি।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ