ফাইল চিত্র।
সকালে খবর পেয়ে তড়িঘড়ি উড়ান ধরে বাগডোগরা হয়ে যখন গাইসালে পৌঁছেছিলাম, তখনও উদ্ধারকাজ শুরু হয়নি। রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম, একটা কোচের উপরে অন্য কোচ, তার উপরে আর একটা, তার মাথায় আরও একটা কোচ। একেবারে উপরের কোচটা ঢেঁকির মতো খানিকটা দুলছে। আর প্রতিটি কোচ থেকে ঝুলছে মৃতদেহ। অনেকটা বটের ঝুরির মতো।
১৯৯৯ সালের অগস্ট। উত্তর দিনাজপুরের গাইসালে রাতের অন্ধকারে দিক ভুল করে অওয়ধ-অসম এক্সপ্রেস এবং ব্রহ্মপুত্র মেল মুখোমুখি ধাক্কা মারে। দু’টিই যাত্রিবাহী ট্রেন। দু’টিই ভিড়ে ঠাসা। দু’টি ট্রেনই ছুটছিল দুরন্ত গতিতে। পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে অত বড় রেল দুর্ঘটনা সাম্প্রতিক ইতিহাসে হয়নি বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে জলপাইগুড়ির নিউ দোমোহনী স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনা উস্কে দিয়েছে গাইসালের স্মৃতি। যদিও গাইসাল ছিল অনেক বড় আকারের। সরকারি হিসেবে সেই দুর্ঘটনায় মারা যান অন্তত ২৮৫ জন।
গাইসালে ৩ অগস্ট সকালে পৌঁছে প্রায় আধ ঘণ্টা সময় লেগেছিল নিজেকে ধাতস্থ করতে। কারণ, এত বড় দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি তখন চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে। চতুর্দিক থেকে ভেসে আসছে মানুষের আর্ত চিৎকার। রেললাইন বরাবর কয়েকশো মিটার জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মানুষের দেহ, তাঁদের জিনিসপত্র, আরও অনেক কিছু। এত মানুষের দেহ দেখে মাথা ঝিমঝিম করছিল। কোথা থেকে শুরু করা উচিত, সেটা বুঝতেই অনেকটা সময় লেগে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ-প্রশাসনের তরফে তখন নীচের দিকে আটকে থাকা জীবন্ত যাত্রীদের টেনে বার করার প্রাণপণ চেষ্টা চলছে।
কাছেই বিহারের কিষানগঞ্জ স্টেশন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই রেলের উদ্ধারকাজ শুরু হয়। একটার উপরে আর একটা উঠে যাওয়া কোচ থেকে ঝুলতে থাকা দেহ ক্রেন দিয়ে নামিয়ে আনা হতে থাকে। সে-বার দেখেছিলাম, শিলিগুড়ির সরকারি হাসপাতালের বড় একটা ঘরে স্তূপাকার শব। দেখেছিলাম, গণচিতায় পরপর পুড়ে চলেছে মানুষ।