মঙ্গলবার কলকাতায় নীতীশ, মমতার সঙ্গে করবেন বৈঠক। ফাইল চিত্র।
পাখির চোখ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। হাতে মাত্র এক বছর। তার আগে বিরোধী জোটকে আরও মজবুত করতে এ বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডি(ইউ) নেতা নীতীশ কুমার। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, মঙ্গলবার দুপুর ২টোয় রাজ্যের প্রশাসনিক দফতর নবান্নে বৈঠকে বসবেন দুই মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকের আলোচ্যসূচি নিয়ে এখনও কিছু জানা না গেলেও, বিরোধী জোট নিয়েই দুই রাজনীতিকের আলোচনা হতে পারে বলে সূত্রের খবর। ঘটনাচক্রে সোমবারই লখনউয়ে সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র নেতা অখিলেশ যাদবের সঙ্গে বৈঠক করার কথা নীতীশের। বিরোধীদের একমঞ্চে নিয়ে আসার কৃতিত্ব অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীকেই দিতে চায় বাংলার শাসকদল। তৃণমূল মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘ দিন ধরেই বিজেপির বিরুদ্ধে সব দলকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। সমমনোভাবাপন্ন দলগুলি একজোট হওয়ায় বিজেপির রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে।”
সম্প্রতি দিল্লি সফরে গিয়ে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন নীতীশ। রাজধানীতে দাঁড়িয়ে নীতীশ জানিয়েছিলেন, বিরোধী জোট গঠনের উদ্দেশে তিনি সব নেতানেত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান। ওই সফরে নীতীশের সঙ্গে দেখা করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। বিরোধী জোট নিয়ে বাম নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও কথা বলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। তবে সূত্রের খবর, কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় আলাদা করে উল্লিখিত হয় মমতা এবং অখিলেশের কথা। কারণ বিজেপি বিরোধিতার প্রশ্নে তাঁদের অবস্থান সুস্পষ্ট হলেও বিরোধী জোটে কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল তৃণমূল এবং সপা। রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের পর অবশ্য খড়্গের ডাকা বিরোধীদের বৈঠকে প্রতিনিধি পাঠায় তৃণমূল। ইদানীং বিজেপির বিরুদ্ধে সকলকে এক হওয়ার বার্তা দিতে দেখা যাচ্ছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকেও। তিনি বহুবার জানিয়েছেন, বিরোধী দলগুলি এক হলে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসবে না। সম্প্রতি বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়ে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনকে ফোন করেছিলেন মমতা। ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন নিজেই টুইট করে সে কথা জানান। নীতীশ এবং স্ট্যালিন দু’জনেই ইউপিএ জোটের শরিক।
অন্য দিকে কিছু দিন আগে পর্যন্তও বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেসের থেকেও দূরত্ব বজায় রাখার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন মমতা, অখিলেশরা। সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর একলা লড়ার কথা শোনা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। ভুবনেশ্বরে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেডি নেতা নবীন পট্টনায়কের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে আসেন মমতা। তার আগে পরে মমতার সঙ্গে এসে সাক্ষাৎ করে যান অখিলেশ এবং জেডি(এস) নেতা এইচডি কুমারস্বামী। এই সব ঘটনাপ্রবাহ তৃতীয় ফ্রন্টের জল্পনা আরও উস্কে দিচ্ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির দ্রুত বদল ঘটে রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের পর। বিরোধী জোট নিয়ে আলাদা করে উদ্যোগী হতে দেখা যায় নীতীশকেও। রবিবারও পটনায় তিনি জানান, ব্যক্তিগত কোনও উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে নয়, দেশের স্বার্থেই তিনি বিরোধী জোট গঠনে উদ্যোগী হতে চান। এই আবহেই মমতার সঙ্গে তাঁর বৈঠককে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।