নৈসর্গিক: এ বার পুজোয় কি চাক্ষুষ করা যাবে ডাল লেকের এই দৃশ্য? চিন্তায় পর্যটকদের একাংশ। ছবি: পিটিআই
পুজোর মরসুমে পর্যটন মানচিত্র থেকে এ বার বাদ পড়তে পারে কাশ্মীর।
দিন কয়েক আগেই জঙ্গি হানার আশঙ্কায় অমরনাথ যাত্রা বাতিল করে পর্যটকদের উপত্যকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল জম্মু-কাশ্মীর সরকার। এ বার সেখানে বলবৎ থাকা ৩৭০ এবং ৩৫-এ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে পুজোর ছুটিতে পর্যটকেরা কতটা কাশ্মীরমুখী হবেন, তা নিয়ে সংশয়ে শহরের একাধিক ভ্রমণ সংস্থা।
কাশ্মীর ভ্রমণ এই মুহূর্তে কতটা নিরাপদ, তা জানেন না সেখানকার হোটেল ও রেস্তরাঁ মালিকদের সংগঠনের সদস্যেরাও। সোমবার দিল্লি থেকে শ্রীনগর ফেরার পথে ফোনে ওই সংগঠনের সভাপতি ওয়াহিদ মালিক বলেন, ‘‘সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থাই বন্ধ। গোটা উপত্যকায় কার্ফু জারি রয়েছে। আমি কী ভাবে বিমানবন্দরের বাইরে বেরোব, তা-ই বুঝতে পারছি না। তা হলে পর্যটকদের কী ভাবে আসতে বলব? আরও মাস দেড়েক না কাটলে কিছুই বলা সম্ভব নয়।’’
পুজোয় ভূস্বর্গ ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল হলে তার বিকল্প কী হতে পারে, তা নিয়েও ভাবতে শুরু করেছেন পর্যটক ও ভ্রমণ সংস্থার মালিকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, সাধারণত অমরনাথ যাত্রার সময়ে বেশ কিছু পর্যটক সেখানে যান। আবার পুজোর আগের মাস থেকে শুরু হয়ে যায় কাশ্মীর যাত্রা। যার রেশ চলে প্রায় কালীপুজো পর্যন্ত। এ বারও বেশ ভাল সংখ্যক পর্যটকই কাশ্মীরের পাশাপাশি লেহ-লাদাখ যাওয়ার জন্য বুকিং করেছিলেন। কিন্তু অমরনাথ যাত্রা বাতিলের পর থেকে শুরু হওয়া অনিশ্চয়তা আরও জোরালো হয়েছে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের পরে।
ভ্রমণ সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, এমনিতেই পুজোর মরসুমে কোথাও হোটেল বা ট্রেনের টিকিট পাওয়া কঠিন। এ বার কাশ্মীর বাতিল করে নতুন জায়গার ব্যবস্থা করতে গেলে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে তাদের। শহরের এক ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধার নীতীশ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘পুজোয় প্রায় ৩০ জনের দল নিয়ে কাশ্মীর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন কী করব, বুঝতে পারছি না। পর্যটকেরাও যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন।’’ কিন্তু পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁরাও কিছুই জানতে পারছেন না। তাই কোনও সিদ্ধান্তও নিতে পারছেন না। আর একটি ভ্রমণ সংস্থার তরফে রক্তিম রায় জানান, অগস্টেই দুই দফায় প্রায় ৭০ জনকে নিয়ে লাদাখ এবং পুজোয় ৬০ জনের দল নিয়ে কাশ্মীর যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। এখন পুরোটাই অনিশ্চিত।
শেষ পাঁচ বছর কাশ্মীর ভ্রমণ পুরোপুরি বাতিলের তালিকায় থাকলেও এ বার পুজোর আগে কাশ্মীর হয়ে লাদাখ যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল কলকাতার আর একটি ভ্রমণ সংস্থার। কর্ণধার সৌমিত্র কুন্ডু বললেন, ‘‘এ বারের পুজোতেও আমরা কাশ্মীর ভ্রমণ রাখিনি। তবে সেপ্টেম্বরে লাদাখ যাওয়ার যে পরিকল্পনা ছিল, তা-ও এই পরিস্থিতিতে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ ‘ট্র্যাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল’-এর সভাপতি বাচ্চু চৌধুরীর কথায়, ‘‘দেশের সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে সাময়িক ভাবে কাশ্মীরের পর্যটন খুব ক্ষতিগ্রস্ত হল, এটা বলা যায়। তা-ও এখনও আশা রাখছি, বাধা কাটিয়ে আবার ভূস্বর্গ নিজের ছন্দে ফিরবে।’’