Recruitment Scam

আমি কাউকে চাকরি পাইয়ে দিইনি, ইডির অভিযোগ উড়িয়ে বললেন নলহাটির সেই বিভাস

মঙ্গলবার কার্তিক বোস স্ট্রিটের একটি ফ্ল্যাটে হানা দিয়েছিলেন ইডির আধিকারিকেরা। যদিও ফ্ল্যাট থেকে কিছু বাজেয়াপ্ত করা হয়নি বলেই ইডি খবর। ওই ফ্ল্যাটের সিল খুলে দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:২৪
Share:

তৃণমূলের প্রাক্তন ওই নেতা জানালেন, কাউকে চাকরি পাইয়ে দেননি তিনি। — নিজস্ব চিত্র।

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত কুন্তল ঘোষ তাঁর দিকে আঙুল তুলেছেন। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) মনে করে, অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। জেলবন্দি তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাথমিক শিক্ষা পর্যদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গেও ‘ঘনিষ্ঠতা’ রয়েছে তাঁর। মঙ্গলবার সেই অভিযোগ খারিজ করলেন বিভাস অধিকারী। তৃণমূলের প্রাক্তন ওই নেতা জানালেন, কাউকে চাকরি পাইয়ে দেননি তিনি। কলেজের প্রয়োজনেই মানিকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

Advertisement

মঙ্গলবার কার্তিক বোস স্ট্রিটের একটি ফ্ল্যাটে হানা দিয়েছিলেন ইডির আধিকারিকেরা। যদিও ফ্ল্যাট থেকে কিছু বাজেয়াপ্ত করা হয়নি বলেই ইডি খবর। ওই ফ্ল্যাটের সিল খুলে দেওয়া হচ্ছে। বিভাস যদিও দাবি করেছেন, ওই ফ্ল্যাট তাঁর নয়। ইডি সূত্রে যদিও জানা গিয়েছিল, এই ফ্ল্যাটের মালিক বিভাসই। প্রশ্ন উঠছে, বিভাস ফ্ল্যাটের মালিক না হলে ওই ফ্ল্যাটের বাইরে লাগানো বোর্ডে তাঁর সংগঠন ‘বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অ্যাসোসিয়েশন’ কেন লেখা ছিল? তিনি অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘একটা উদাহরণ দেখান তো যে, কোথাও বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অ্যাসোসিয়েশনে আমার সই রয়েছে! এখানে তার অফিস ছিল!’’

তা হলে কী ভাবে এল ওই বোর্ড? বিভাস জানিয়েছেন, ওই ফ্ল্যাটে নতুন সংগঠন খোলার কথা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আর তা হয়ে ওঠেনি। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তাপস মণ্ডলের সঙ্গে বিবাদের কারণেই ওই সংগঠন খোলার কথা ভেবেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাসোসিয়েশন তাপস মণ্ডলের। ওদের সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় আমরা বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অ্যাসোসিয়েশন করেছি। ভেবেছিলাম ওই ঠিকানায় অফিস করব। বোর্ডও লাগিয়েছিলাম। কিন্তু তার কোনও কাজ শুরু করতে পারিনি। প্রেসিডেন্ট আমি ছিলাম।’’

Advertisement

কেন কাজ শুরু করা যায়নি, মঙ্গলবার সে কথাও জানিয়েছেন বিভাস। তিনি বলেন, ‘‘২০১৭ সালের শেষে বা ২০১৮ নাগাদ ওই সংগঠন চালু করার কথা হয়েছিল। তার পর আমি দুর্ঘটনার মুখে পড়ি। সাড়ে তিন বছর কোনও কাজ করতে পারিনি।’’

তবে মানিকের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বিভাস। তিনি বলেন, ‘‘মানিকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। অস্বীকার করার জায়গা নেই। পশ্চিমবঙ্গে যাঁরা কলেজ চালান, কার হিম্মত রয়েছে যে, পর্ষদ সভাপতির সঙ্গে দেখা না করে কলেজ চালাবেন? রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে দেখা করতে হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, মানিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল বলে নিয়োগ দুর্নীতিতে তার যোগ খোঁজার অর্থ হয় না। তিনি বলেন, ‘‘আমি কাউকে চাকরি পাইয়ে দিইনি। আশ্রমকে কালিমালিপ্ত করার জন্য চক্রান্ত হচ্ছে। কেউ উদাহরণ দিন চাকরি করিয়েছি।’’

শিক্ষক নিয়োগ দু্র্নীতিকাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়ক মানিকের গ্রেফতারির পর গত ১৫ অক্টোবর কার্তিক বোস স্ট্রিটের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় ইডি। তার পর ফ্ল্যাটটি সিল করে দেয়। তখন থেকে বন্ধ ছিল ফ্ল্যাটটি। ইডি সূত্রে তখন জানা গিয়েছিল, যে ওই ফ্ল্যাটের মালিক বিভাস। ফ্ল্যাটটির বাইরে একটি বোর্ডও লাগানো ছিল। সেখানে লেখা ছিল, ‘বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অ্যাসোসিয়েশন’। ইডির দাবি, এই প্রতিষ্ঠানটি চালাতেন বিভাস। সংস্থাটির রেজিস্টার্ড নম্বরও উল্লেখ করা হয়েছে ওই বোর্ডে। মঙ্গলবার সেই ফ্ল্যাটে ফের হানা দেয় ইডি। বিভাস যে আশ্রমের সঙ্গে জড়িত, সেখানকার সদস্যদের তরফে সিল করা ফ্ল্যাটটি খুলে দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। মঙ্গলবার সেই ফ্ল্যাট খুলে দেওয়া হয়েছে।

কুন্তল দাবি করেছিলেন, বিভাস নাকি তাপস মণ্ডলের মতোই এক জন। তাঁকে অবিলম্বে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন বলে দাবি তোলেন নিয়োগ-দুর্নীতিতে নাম উঠে আসা গোপাল দলপতিও। যদিও বিভাসের দাবি, কোনও দুর্নীতিতেই তিনি যুক্ত নন। কুন্তল ও গোপাল নামে ‘দুই চোর-ডাকাত’ তাঁর নাম টেনে এনে তদন্তকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।

বিভাস যা-ই দাবি করুন না কেন, তাঁর সম্পত্তি ও বৈভব নিয়ে বীরভূমের নলহাটিতে চর্চা কম নয়। কয়েক মাস আগেও তিনি ছিলেন তৃণমূলের নলহাটি-২ ব্লকের সভাপতি। সেই পদ তিনি ছেড়েছেন। ওই ব্লকেরই কৃষ্ণপুর গ্রামে কয়েক একর জমির উপরে অনুকূল ঠাকুরের নামে বিশাল আশ্রম তৈরি করেছেন বিভাস। একটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির কারখানা রয়েছে আশ্রম চত্বরে। তার পাশেই রয়েছে বিএড কলেজ। একটু দূরে ডিএলএড কলেজ। সবই তাঁর। বিভাস বলেছিলেন, ‘‘আমি পরিবারের জন্য কিছু করিনি। সবই আশ্রমের জন্য। ৩২ লক্ষ ভক্ত রয়েছেন। তাঁদের ভিক্ষায় অল্প অল্প করে আশ্রম।’’

বিভাসের দাবি, তিনি বর্তমানে তিনি সক্রিয় ভাবে কোনও দল করছেন না। ২০২০ সাল থেকে সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউসিং কর্পোরেশনের (কেন্দ্রীয় সরকারি) এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ক্যাবিনেটের মনোনীত এক জন ডিরেক্টর। বর্তমানে সেই পদে থেকে কাজ করছেন। সঙ্গে আশ্রমের দেখাশোনাও করেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement