ফের উত্তপ্ত ভাটপাড়া। ফাইল চিত্র।
বিজেপির সংসদীয় দল ফিরে যাওয়ার পরই পুলিশ-জনতার দফায় দফায় সংঘর্ষে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল ভাটপাড়া। কাঁকিনাড়ার কাছারি রোডে টহল দিচ্ছিল পুলিশ। তাদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন এলাকাবাসীরা। তার পরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। পাল্টা লাঠিচার্জ করে পুলিশ। সে সময় এক বিজেপি কর্মীর মাথা ফেটে যায় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে আসেন খোদ পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা।
এ দিন সকাল থেকেই একটা থমথমে পরিস্থিতি ছিল ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া এলাকায়। সেই পরিস্থিতির মধ্য়েই বাম-কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল আসে। কিন্তু বিক্ষোভের মুখে পড়ে তাঁদের ফিরে যেতে হয়। দুপুরে ভাটপাড়ায় যায় তিন সদস্যের বিজেপির সংসদীয় দল। নেতৃত্বে ছিলেন সাংসদ এস এস অহলুওয়ালিয়া। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সত্যপাল সিংহ এবং বি ডি রাম। প্রথমেই তাঁরা নিহত রামবাবু সাউয়ের বাড়িতে যান। তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। এর পর ধর্মবীরের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা। এলাকায় অশান্তির জন্য পুলিশ প্রশাসনকেই দায়ী করেন অহলুওয়ালিয়া।
সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “রামবাবু, ধর্মবীর কোনও আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। পুলিশ ওঁদের গুলি করে মারে।” এর পরই তাঁর প্রশ্ন, “পুলিশ দাবি করছে তারা শূন্যে গুলি চালিয়েছে। যদি তারা শূন্যে গুলি চালিয়ে থাকে তা হলে মানুষের শরীরে লাগল কী ভাবে? ওঁরা কি তা হলে হাওয়ায় ভাসছিল? গোটা পরিস্থিতির জন্য তৃণমূল ও পুলিশ দায়ী।” পুলিশকে নিয়েই তৃণমূল হামলা চালাচ্ছে বলেই দাবি করেন অহলুওয়ালিয়া। কার প্ররোচনায় পুলিশ গুলি চালাল, এই অধিকার কে দিল পুলিশকে সেটা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলেই জানান বিজেপি সাংসদ। পাশাপাশি গোটা ঘটনার রিপোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ভাটপাড়ায় বিজেপির সংসদীয় দল। নিজস্ব চিত্র।
পরিস্থিতিটা যে স্বাভাবিক হয়নি, সকালে কাঁকিনাড়ার কাছারি রোডে পৌঁছতেই টের পাওয়া গিয়েছিল। গোটা এলাকা ছিল কার্যত শুনশান। দেখে মনে হবে যেন কোনও বন্ধ চলছে! তার মধ্যেই দু’একটা দোকানপাট খোলা ছিল। গুটি কয়েক লোকও রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তাঁদের চোখে-মুখে ধরা পড়েছিল আতঙ্কের ছাপ। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বলেন, দেখে মনে হচ্ছে এলাকার পরিবেশ শান্ত, কিন্তু পরমুহূর্তে কী হবে কেউ জানে না! পরিস্থিতি এতটাই খারাপ।
মূলত পুলিশের বিরুদ্ধেই জনরোষ স্পষ্ট। পুলিশ দেখলেই ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন এলাকাবাসীরা। বার বারই তাঁরা অভিযোগ করছেন, ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া এলাকায় অশান্তির পিছনে পুলিশের মদত রয়েছে। শুক্রবারেও দেখা গিয়েছে শোক মিছিলের সময় পুলিশের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এ দিকে, শুক্রবার রাতেই ভাটপাড়ার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সেখানে যান মনোজ বর্মা। গভীর রাত পর্যন্ত ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়ার বিভিন্ন এলাকা হেঁটে ঘুরে দেখেন। এর পরই রাতে তিনি অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার এবং ভাটপাড়ার ওসি-র সঙ্গে এক দফা বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, গণ্ডগোলের পিছনে থাকা সেই অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করার জন্য ভটাপাড়া-সহ পার্শ্ববর্তী থানার আধিকারিকদের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি বহিরাগতদেরও চিহ্নিত করার কথা বলেন কমিশনার।
আরও পড়ুন: ভাটপাড়ায় ফের আক্রান্ত পুলিশ, সিবিআই তদন্তের দাবি সাংসদ অর্জুনের
পুলিশ সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ওই সব এলাকার আধিকারিকরা অপরাধীদের একটি তালিকা কমিশনারের হাতে তুলে দিয়েছেন। তালিকায় বেশি কিছু দাগী দুষ্কৃতীর নাম রয়েছে। শুধু ভাটপাড়া নয়, কামারহাটি, টিটাগড়ের বেশি কিছু দুষ্কৃতীর নামও উল্লেখ রয়েছে ওই তালিকায়। তাদের কয়েক জন সম্প্রতি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে কাঁকিনাড়া-ভাটপাড়া এলাকায় ঢুকেছে। সূত্রের খবর, নতুন কমিশনার নাকা এলাকা তল্লাশির পাশাপাশি নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে অভিযানের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এলাকার কোন কোন জায়গায় অস্ত্র ও বোমা মজুত রয়েছে তা খুঁজে বার করার জন্য কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সব জায়গায় অভিযান চালানোর উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন নতুন কমিশনার।
আরও পড়ুন: আত্মীয় সেজে ঘুরছে বহিরাগতরা, পুলিশ কেন ধরছে না, প্রশ্ন এলাকাবাসীর
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।