ব্যারাকপুরের নোনা চন্দনপুকুর এলাকায় বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ। —নিজস্ব চিত্র।
বিক্ষোভ, দফায় দফায় অবরোধ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ— ভাটপাড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবারও উত্তপ্ত গোটা এলাকা। সকাল থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। জোর করে দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। অবরোধের জেরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে, নৈহাটি-চুঁচুড়া ফেরি সার্ভিস বন্ধ, ট্রেন চলাচলও বিঘ্ন ঘটেছে।
রবিবার একটি পার্টি অফিস দখলকে কেন্দ্র করে তৃণমূল এবং বিজেপি কর্মীদের মধ্যে তুমুল গণ্ডগোল বাধে। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল কর্মীদের ছোড়া ইটে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের মাথা ফেটে যায়। এর পরই গণ্ডগোল চরমে ওঠে। পুলিশ জানিয়েছে, বিজেপি কর্মীদের ছোড়া ইটের ঘায়ে জখম হন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা-সহ আট পুলিশ কর্মী। অর্জুনের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া এবং মারধরের অভিযোগ আনে তৃণমূল। আবার পুলিশের লাঠির ঘায়ে তাদের বেশ কয়েক জন কর্মী জখম হয়েছেন বলে বিজেপি দাবি করেছে। অনেক চেষ্টার পর র্যাফ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও পুরোপুরি শান্ত হয়নি জগদ্দল-ভাটপাড়ার পরিবেশ। এর প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে ব্যারাকপুরে ১২ ঘণ্টার বনধের ডাক দেয় বিজেপি।
অশান্তি ঠেকাতে সকাল থেকে পুলিশের টহলদারী চলছে এলাকায়। তবে কাঁকিনাড়ায় পরিবেশ যথেষ্টই থমথমে। সকাল থেকেই বিজেপি কর্মীরা কাঁকিনাড়া-ব্যারাকপুর অঞ্চল জুড়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। অবরোধ করছেন রাস্তা। পুলিশ লাঠিচার্জ করে অবরোধ তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্রের খবর, সকাল ১০টা নাগাদ সুভাষনগর কলোনিতে বিজেপি এবং তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ব্যারাকপুরের শ্যামনগরে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ চলে। ব্যারাকপুরের ঘোষপাড়া রোড এবং ব্যারাকপুর থানার সামনে অবরোধ করেন বিজেপির কর্মীরা। সকালে ব্যারাকপুর ব্রিজের কাছে জোর করে দোকান বন্ধ করতে গিয়ে তৃণমূল সমর্থকদের সঙ্গে আরও এক দফা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন বিজেপি সমর্থকরা। পুলিশ লাঠিচার্জ করে দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে।
আরও পড়ুন: ভাটপাড়ায় ফের তাণ্ডব, বোমা-গুলি, মাথা ফাটল অর্জুনের
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে এই বনধের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। সাধারণ মানুষ বেশির ভাগই আতঙ্কে বাড়ি থেকে বেরোননি। রাস্তাঘাট তাই একেবারে থমথমে। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করায় প্রচুর ট্রাক, লরি লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে রাস্তায়। সকালের দিকে কাঁকিনাড়ায় কিছু ক্ষণের জন্য ট্রেন অবরোধ হয়েছিল। ফলে শিয়ালদহ-রানাঘাট লাইনে সকালের দিকে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
ব্যারাকপুর রেলব্রিজের কাছে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়েন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশও পাল্টা ইট ছুড়ছে। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
দার্জিলিং মেল, পটনা-কলকাতা এক্সপ্রেস সময়ের চেয়ে দেরিতে পৌঁছয়। পরে অবশ্য ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে জানিয়েছে রেল। তবে ট্রেনে যাত্রীর সংখ্যা ছিল খুব কম। অশান্তির অভিযোগে সব মিলিয়ে মোট ৩০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ দিন সকালে হাসপাতালে গিয়ে অর্জুন সিংহের সঙ্গে দেখা করে আসেন রাজ্যপাল রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
আরও পড়ুন: মেট্রোর ধাক্কা! বৌবাজারে ফাটল-ধস ১৮ বাড়িতে, ঘরছাড়া ২৮৪