ভারতী ঘোষ।
ভোট এসেছে। ফিরেছে ইতিহাস। নেতানেত্রীরা প্রায়ই ফিরছেন অতীতে। স্মরণ করাচ্ছেন অশান্তির দিনগুলো। তবে অতীত-স্মরণে মাঝে মধ্যে ঘটছে খানিক বিস্মরণও।
প্রতিপক্ষকে কটাক্ষ করতে গিয়ে শুক্রবার ঝাড়গ্রামের বেলিয়াবেড়ায় ভারতী ঘোষ জ্ঞানেশ্বরী নাশকতার সঙ্গে জুড়লেন ছত্রধর মাহাতোকে। বাস্তব হল, জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডের সময় জেলেই ছিলেন ছত্রধর। দিন কয়েক আগে মেদিনীপুরের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, সে সময়ে (জঙ্গলমহল যখন অশান্ত) ছত্রধর ছিলেন লালগড়ের তৃণমূল ব্লক সভাপতি। বাস্তব হল, সে সময় ব্লক সভাপতি ছিলেন, বনবিহারী রায়।
শুভেন্দু অধিকারীর অবস্থান স্পষ্ট হয়নি এখন। আপাতত তাই জঙ্গলমহলে লড়াই দ্বিমুখী। ছত্রধর মাহাতো বনাম ভারতী ঘোষ। জনসাধারণের কমিটির প্রাক্তন নেতা বনাম প্রাক্তন আইপিএস। ছত্রধর তৃণমূলের ‘মুখ’। বিজেপি-র রাজ্য নেত্রী ভারতীকেও জঙ্গলমহলের ‘মুখ’ হিসেবে তুলে ধরছে গেরুয়া শিবির।
এদিন বেলিয়াবেড়ার নোটা এলাকার হাসপাতাল মাঠে বিজেপি-র এক দলীয় সভায় এসেছিলেন ভারতী। ছত্রধরকে ‘মাওবাদী’ তকমা দিয়ে ভারতী অভিযোগ করেন, ছত্রধরের প্ররোচনায় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের নাশকতা হয়েছিল। ভারতী বলেন, ‘‘১৬০ জন যাত্রী মারা গিয়েছিলেন। যাঁর হাত এমন রক্তাক্ত, যিনি ইউএপিএ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, তাঁকে জেল থেকে বের করে এনে তৃণমূলের নেতা বানিয়ে পুলিশ পাহারা দিয়ে জঙ্গলমহলে ছেড়ে দিয়েছেন মাননীয়া। যাতে আপনাদের মতো সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে টোকা মেরে ভয় দেখাতে পারে।’’ ভারতী ছত্রধরকে জ্ঞানেশ্বরী নাশকতার সঙ্গে জুড়লেও বাস্তব ঘটনা হল, ছত্রধর গ্রেফতার হন ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে। আর ঝাড়গ্রামের সরডিহায় জ্ঞানেশ্বরী নাশকতা হয়েছিল ২০১০ সালের মে মাসে। মমতা তখন ছিলেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী। ভারতী অবশ্য সে সময়ে জঙ্গলমহলে ছিলেন না। তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার হন তিনি। সেই সঙ্গে ছত্রধরকে সেই সময়ের মাওবাদীদের ব্লক সভাপতি বলেও কটাক্ষ করে ভারতী বলেন, ‘‘ছত্রধর তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ছিলেন না। মাওবাদীদের ব্লক সভাপতি ছিলেন। এটা মাননীয়া গুলিয়ে ফেলেছেন।’’ ভারতীর অভিযোগ প্রসঙ্গে ছত্রধর বলেন, ‘‘বিজেপি-র পায়ের তলায় মাটি সরে গিয়েছে। তাই ভারতী ঘোষ এখন প্রলাপ বকছেন। ভারতীকে কেউ বিশ্বাস করেন না। উনি হাজার বার এসেও পদ্মফুল ফোটাতে পারবেন না।
এদিন নাম না করে মমতাকে ‘মাননীয়া’ বিশেষণ যোগে বারে বারে কটাক্ষ করেন ভারতী। দশ বছরের তৃণমূলের জমানায় প্রকৃত উন্নয়ন হয়নি দাবি করে বিজেপিকে রাজ্যের ক্ষমতায় নিয়ে আসার পক্ষে সওয়াল করেন তিনি। রাজ্য সরকারকে ‘কাটমানির সরকার’ বলে কটাক্ষ করে ভারতীর অভিযোগ, পুলিশে কয়েক হাজার পদ খালি। কিন্তু রাজ্যের কোষাগার শূন্য হয়ে যাওয়ায় নিয়োগ হচ্ছে না। সিভিক ভলান্টিয়ারদের চাকরি পাকা হচ্ছে না। ভারতীর দাবি, রাজ্যে বিজেপি-র সরকার ক্ষমতায় এলে সবার উন্নয়ন হবে। ঘুষ না দিয়ে চাকরি পাবেন যোগ্য প্রার্থীরা। এদিন মমতার উদ্দেশে ভারতীর হুঁশিয়ারি, ‘‘আগুন নিয়ে খেলবেন না মাননীয়া। যতক্ষণ বিজেপি চাইবে ততক্ষণ তৃণমূল থাকবে।’’