ভানু পেয়েছিলেন লাইসেন্স। নিজস্ব চিত্র।
গ্রাম পঞ্চায়েতই তাঁকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছিল, তবে আতশবাজির দোকানের জন্য। তারই দৌলতে এগরার খাদিকুল গ্রামের কৃষ্ণপদ ওরফে ভানু বাগ বাজি কারখানা চালাতেন বলে জানা যাচ্ছে।
খাদিকুলে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের সপ্তাহ পেরিয়েছে। সব মিলিয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে এই বিস্ফোরণে। মারা গিয়েছেন ভানুও। বিস্ফোরণের পরে পুলিশ বার বারই জানিয়েছে, এখানে বাজি কারখানার কোনও অনুমতি ছিল না। বেআইনি ভাবেই কারখানা চালাচ্ছিলেন ভানু। এর মধ্যেই সামনে এসেছে এগরা -১ ব্লকের সাহাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে ভানুকে দেওয়া হয় ট্রেড লাইসেন্সের নথিটি।
সূত্রের দাবি, এই নথি অনুযায়ী, ২০১৮-’১৯ সালে এই ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। তাতে সই রয়েছে তৎকালীন পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের শান্তিলতা দাসের। তিনি পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের স্ত্রী-ও। ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ থেকে তিন দিনের জন্য ৩০০ টাকার বিনিময়ে কৃষ্ণপদকে ওই ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয় খাদিকুল মৌজার ৫২০ নম্বর দাগে ‘মা সারদা বাজি ভান্ডার’ নামে একটি দোকান চালানোর জন্য।
শান্তিলতা মানছেন, ‘‘ভানু বাগকে ২০১৮-’১৯ সালে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল।’’ তত দিনে ভানুর কারখানায় দু’বার বিস্ফোরণ হয়েছে, বেশ কয়েক জন মারাও গিয়েছে। তার পরেও কেন এই লাইসেন্স? এর জবাব শান্তিলতা দেননি। ভূমি দফতরের নথি সূত্রে দাবি, ভানুর বাজির দোকানের জমিও স্থানীয় মাইতি পরিবারের।
স্থানীয় সূত্রে দাবি, বাজির দোকানের নামে পাওয়া ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করেই বাজি তৈরির বেআইনি কারবার চালাতেন ভানু। ৩ দিনের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল লোকসভা ভোটের সময়ে যাতে ধরপাকড়ে সমস্যায় না পড়েন ভানু। পরে রাজ্য সরকার অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া শুরু করে। তখন অবশ্য ভানুর ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ হয়নি বলে প্রশাসনিক সূত্রে দাবি।
বর্তমানে সাহাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের চালাচ্ছে বিরোধী জোট। বর্তমান প্রধান স্বপন দণ্ডপাট বলছেন, ‘‘বাজি কারখানা থেকে প্রতি মাসে টাকা নিতেন তৎকালীন প্রধান।’’ তা অস্বীকার করে শান্তিলতার দাবি, ‘‘ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছেন পঞ্চায়েতের দু’জন ট্যাক্স কালেক্টর।’’ কিন্তু সই তো আপনার? শান্তিলতার জবাব, ‘‘পঞ্চায়েতের যাবতীয় নথিতে আগাম স্বাক্ষর করে দিতাম। বাজি কারখানার বিষয়ে কিছুই জানতাম না।’’
এ দিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘এগরায় বাজি বানানোর লাইসেন্স দিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রধান। পুলিশ যদি নজরদারি না চালায়, তা হলে তা দিয়েই বোমা বানানো চলবে।’’ তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘যাঁরা অনুমতি দিয়েছিলেন, তাঁরা অধিকারী পরিবারের হাত ধরেই পঞ্চায়েতের দায়িত্বে ছিলেন। তাই এটা নিয়ে জবাবদিহি তাঁদের করতে হবে।’’