ফাইল চিত্র।
ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রিয়ঙ্কা তিবরেওয়ালকে প্রার্থী করল বিজেপি। তিনি পেশায় আইনজীবী এবং যুব মোর্চার রাজ্য সহ-সভানেত্রী। গত বিধানসভা নির্বাচনে এন্টালিতে তিনি পরাজিত হয়েছেন। তার আগে ২০১৫ সালে কলকাতা পুরসভা নির্বাচনেও তিনি জয় পাননি। এ বার তাঁর লড়াই মু্খ্যমন্ত্রী মমতার বিরুদ্ধে।
কে ভবানীপুরে বিজেপির প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে গুঞ্জন চলেছে। বহু নামও সামনে এসেছে। তখন প্রিয়ঙ্কার নাম নিয়েও চর্চা হয়েছিল। রাজ্য থেকে দিল্লিতে সম্ভাব্য প্রার্থীর যে তালিকা পাঠানো হয়, তাতে প্রিয়ঙ্কার নাম ছিল বলে শোনা গিয়েছিল। তবে সেই সময়ে রাজ্য বিজেপির দায়িত্বশীল একাধিক কর্তা তা স্বীকার করতে চাননি। প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরে শুক্রবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, তাঁদের সুপারিশে প্রিয়ঙ্কার নাম ছিল।
শমসেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী থাকছেন যথাক্রমে মিলন ঘোষ এবং সুজিত দাস। ওই দুই কেন্দ্রে অন্য প্রার্থীদের মৃত্যুতে ভোট স্থগিত হয়ে গিয়েছিল।
নন্দীগ্রামে ভোটে জিততে না পারলেও মমতা নিয়ম মেনে ৬ মাসের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন। এ বার ভবানীপুরে জিতলে তিনি পাকাপাকি ভাবে বিধায়ক হয়ে মুখ্যমন্ত্রী থেকে যাবেন। প্রিয়ঙ্কার মনোনয়নের প্রসঙ্গে দিলীপ এ দিন ‘নন্দীগ্রাম-খোঁচা’ দিয়ে বলেন, ‘‘গত বার হারা এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে আর এক হারা প্রার্থীকে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতি কী?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত প্রার্থী নির্বাচন করেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।’’
রাজ্যে ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে বিজেপির পক্ষ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন প্রিয়ঙ্কাই। আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। বিজেপি-র একাংশের মতে, প্রিয়ঙ্কার এই ‘সাফল্যের’ জন্যই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে ভবানীপুরে মমতার বিরুদ্ধে লড়ার যোগ্য বলে মনে করেছেন। দিলীপ বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে আদালত যে রায় দিয়েছে, তাতে প্রিয়ঙ্কা তিবরেওয়ালের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনিই প্রথম এন্টালির সন্ত্রাসের ঘটনা নিয়ে আদালতে যান। তিনি জেলায় জেলায় গিয়ে আক্রান্তদের দিয়ে অভিযোগ করিয়েছেন। দলের তরফে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ভবানীপুরে এ বারে সন্ত্রাসের মুখ বনাম প্রতিবাদের মুখের লড়াই।’’
দিলীপের আরও যুক্তি, ‘‘এক জন মহিলার বিরুদ্ধে এক জন মহিলাকেই সামনে রেখে লড়া ভাল। কারণ মুখ্যমন্ত্রী পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখলেই বলেন, মহিলাকে আক্রমণ করা হচ্ছে। তাই যাতে তাঁকে সরাসরি আক্রমণ করা যায়, যাতে তিনি মহিলা হিসাবে বাড়তি রক্ষাকবচ না পান, তার জন্য এক জন মহিলাকে প্রার্থী করা হয়েছে।’’
প্রিয়ঙ্কা এ দিন বলেন, ‘‘আমার লড়াই কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে। তবে যাঁর ইশারায় এই সন্ত্রাস হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে তো অবশ্যই লড়াই হবে। নন্দীগ্রামের মানুষ যে যে কারণে মুখ্যমন্ত্রীকে হারিয়েছেন, ভবানীপুরের সচেতন মানুষও সেই সব মাথায় রাখবেন।’’
ভবানীপুর, শমসেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরের জন্য ২০ জন ‘তারকা প্রচারক’-এর তালিকা তৈরি হয়েছে বলে দিলীপ জানান। বিজেপি সূত্রের খবর, সেখানে দিলীপ, শুভেন্দু ছাড়াও স্মৃতি ইরানি, শাহনওয়াজ হুসেন প্রমুখের নাম আছে। বিজেপি আগেই সাংসদ অর্জুন সিংহ এবং দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সিংহকে ভবানীপুরের ভোটের পর্যবেক্ষক এবং ভারপ্রাপ্ত নেতা করেছে। শমসেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরের ভোটের পর্যবেক্ষক করা হয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে। ওই দুই কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নেতা হয়েছেন সাংসদ সুকান্ত মজুমদার।