মমতাই সম্ভবত প্রথম নেতা যিনি ভোটে জিতে তিন আঙুলে বিজয়প্রতীক দেখালেন। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
রেকর্ড ব্যবধানে ভোটে জিতে তিনি দৃশ্যতই আনন্দিত। কিন্তু আনন্দের আতিশয্যে কি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটু ভুল করে ফেললেন! তা না হলে দু’আঙুলের বদলে তিন আঙুলে জয়চিহ্ন দেখাবেন কেন? মমতা নিজে অবশ্য তাঁর এই ভাবে জয়-চিহ্ন দেখানোর ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
মে মাসেও বিধানসভা ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসার পর অভিষেক-কন্যা আজানিয়াকে সঙ্গে নিয়ে জয়চিহ্ন দেখিয়েছিলেন মমতা। তবে তা ছিল দু’আঙুল ব্যবহার করে। অথচ রবিবার ভবানীপুরে ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর কালীঘাটের বাড়ির সামনে দেখা গেল তিন আঙুলে জয়ের চিহ্ন দেখাতে। পরে মুখ্যমন্ত্রীর দেখাদেখি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনকি তৃণমূলের অন্য নেতা-নেত্রীদেরও তিন আঙুলেই জয়-চিহ্ন দেখাতে দেখা গেল।
এর আগে এ দেশের কোনও রাজনৈতিক নেতাকে প্রকাশ্যে এমন চিহ্ন দেখাতে দেখা যায়নি। সে ক্ষেত্রে মমতাই সম্ভবত প্রথম নেতা যিনি ভোটে জিতে তিন আঙুলে জয়চিহ্ন দেখালেন। তবে ভারতে না হলেও দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশে মমতার দেখানো এই চিহ্নের বিশেষ অর্থ রয়েছে। ইতিহাস বলছে, হাতের মাঝের তিনটি আঙুল অর্থাৎ তর্জনী, মধ্যমা এবং অনামিকা একসঙ্গে দেখানোর অর্থ ‘বিপ্লবের শুরু’। দক্ষিণ এশিয়া-সহ আমেরিকার বহু দেশে আবার তিন আঙুলের এই ভঙ্গিমাকে ‘গণতন্ত্রপন্থী চিহ্ন’ও মনে করা হয়।
‘দ্য হাঙ্গার গেমস’ নামের একটি উপন্যাসে প্রথম এই চিহ্নের ব্যবহার দেখা গিয়েছিল। উপন্যাসটি লেখেন সুজান কলিন্স নামের এক আমেরিকান লেখিকা। তাঁর কাহিনির এক প্রতিবাদী চরিত্রকে দেশের এক আম নাগরিক সম্মান জানিয়েছিলেন তিন আঙুলে স্যালুট ঠুকে। পরে তিন আঙুলের ওই বিশেষ অভিবাদন বাস্তবেও ব্যবহার করা হয়। ২০১৪ সালে তাইল্যান্ডের আন্দোলনের সময় উদারতা, সাম্যবাদ, সৌভ্রাতৃত্ব ও গণতন্ত্রের চিহ্ন হিসেবে তিন আঙুলে অভিবাদন জানানোর রীতি চালু হয়।
এর পর গত সাত বছরে বিভিন্ন সময়ে হংকং, মায়ানমার, কম্বোডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, অভ্যূত্থান, বিপ্লব এবং প্রতিবাদের চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার হয়েছে তিন আঙুলের এই জয়চিহ্ন।
রবিবার ভবানীপুর উপনির্বাচনে ৫৮ হাজার ৮৩৫ ভোটের ব্যবধানে জয়র পর মমতা এই চিহ্ন ব্যবহার করলেন। মমতা জানিয়েছেন, তিনি সবাইকে নিয়ে চলায় বিশ্বাসী। তাঁর আদর্শ মা-মাটি-মানুষ। তিনটি উপনির্বাচনের তিনটিতেই জিতেছে তাঁর দল। তাই দু’আঙুলে নয়, তিন আঙুলে জয়ের চিহ্ন দেখাবেন তিনি।