BGBS 2022

BGBS 2022: ৩.৪২ লক্ষ কোটি টাকার লগ্নি প্রস্তাব, উঠল প্রশ্নও

এমন আকাশছোঁয়া বিনিয়োগের অঙ্ক এবং বিপুল সংখ্যক কাজের সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা সাড়ম্বরে ঘোষণার পরেও বাস্তবের মাটিতে তা চোখে পড়ে না কেন?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২২ ০৬:০৮
Share:

ফাইল চিত্র

মোট ১৩৭টি সমঝোতাপত্র (মউ) ও আগ্রহপত্র সই। সেই সূত্রে প্রাথমিক ভাবে ৩,৪২,৩৭৫ কোটি টাকার লগ্নি প্রস্তাব। আর তার হাত ধরে অন্তত ৪০ লক্ষ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা। এই তিন পরিসংখ্যানের বুনোটে ষষ্ঠ বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনের (বিজিবিএস) সাফল্য দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, পরের বার এই সম্মেলন হবে তিন দিনের।

Advertisement

প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, প্রতি বার এমন আকাশছোঁয়া বিনিয়োগের অঙ্ক এবং বিপুল সংখ্যক কাজের সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা সাড়ম্বরে ঘোষণার পরেও বাস্তবের মাটিতে তা চোখে পড়ে না কেন? কটাক্ষ ভেসে এসেছে, গত পাঁচ সম্মেলনের সূত্রে পাঁচটি নতুন কারখানার উদ্বোধনও মুখ্যমন্ত্রী করেছেন কি? মমতা যদিও সম্মেলনের দু’দিনেই জানিয়েছেন, গত পাঁচ বিজিবিএসে যে ১২ লক্ষ কোটি টাকার লগ্নি-প্রস্তাব এসেছে, এখন তা বিভিন্ন স্তরে বাস্তবায়নের পথে।

বৃহস্পতিবার মমতার দাবি, ‘‘চোখধাঁধানো সাফল্য এসেছে সম্মেলনে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, দেশের বৃদ্ধির হারের তুলনায় রাজ্যের হার অনেক ভাল। একই ছবি কর্মসংস্থানে। রাজ্যে পাঁচশোর বেশি ক্লাস্টার এবং দু’শোর বেশি শিল্পতালুক রয়েছে।

Advertisement

তাতে চাহিদা বাড়ছে। কয়েক বছরে এই ক্ষেত্রে ১.৩৬ কোটি মানুষ কাজ পেয়েছেন। কৃষি, পরিকাঠামো এবং সামাজিক ক্ষেত্রে রাজ্যের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফিরে শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানই যে তাঁর পাখির চোখ, তা বারবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘ট্রাস্ট (বিশ্বাস), টিমওয়ার্ক (সম্মিলিত চেষ্টা) এবং টেকনোলজি (প্রযুক্তি) —সাফল্যের তিন মন্ত্র।’’ শিল্প-পরিবেশ মজবুত করতে পৃথক দায়িত্ব পেয়েছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী।

উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গে রফতানি হাব তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, ‘‘পরের ১০ বছরে বাংলা যা করবে, তাকে কেউ ছুঁতে পারবে না।’’

বিরোধীরা অবশ্য বিনিয়োগের এই অঙ্ককে আমল দিতে নারাজ। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, ‘‘(শিল্প টানতে) মুখ্যমন্ত্রীর এত বারের ব্যর্থতার ট্র্যাক রেকর্ড। ফের তা ব্যর্থ হবে বলেই আশা করি। আগামী কত বছরে কারা বিনিয়োগ করবেন, সেই কথাগুলি খুব কায়দা করে শিল্পপতিরা বলেছেন। আদানিই যেমন বলেছেন, আগামী এত বছরে করব।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘আগে আরও পাঁচটি শিল্প সম্মেলন হয়েছে। পাঁচটি বড় কারখানার নাম বলতে পারবেন, যার ফিতে ইদানীং কালে মুখ্যমন্ত্রী কেটেছেন?’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীরও বক্তব্য, ‘‘প্রতি বার বাণিজ্য সম্মেলন থেকে মুখ্যমন্ত্রী বিনিয়োগের অঙ্ক ঘোষণা করেন, এ বারও করেছেন। সব কাগজে-কলমে হয়, বাস্তবে কিছু হয় না।’’

কোভিড-কাল পেরিয়ে প্রথম রাজ্য হিসেবে শিল্প সম্মেলন আয়োজন প্রসঙ্গে মমতা অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘আমিই বললাম এ বার এটা করা যাক। অতিমারি বা রোগ আসবে-যাবে, কিন্তু উন্নয়নকে থামানো যায় না। সবাই রাজ্যকে ভালবেসে এসেছেন। রাজ্যপালকেও ধন্যবাদ।’’

রাজ্যের দাবি, এ বার সম্মেলনে ৪২টি দেশ থেকে ৪৩০০ জন প্রতিনিধি এসেছেন। মমতার ঘোষণা, আগামী বছর ১, ২ এবং ৩ ফেব্রুয়ারি ফের হবে বিজিবিএস। তবে প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, ওই সময়েই হয় কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট।

গুজরাত থেকে এ রাজ্যে প্লাস্টিক পণ্যের কারখানা গড়া জীগিশ দোশী এ দিন বিজিবিএসের এক আলোচনাসভায় জানান, আগের বিজিবিএসে এসে রাজ্যে জমি কিনে কারখানা গড়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলার মেধাসম্পদ অত্যন্ত ভাল। বাংলা ও গুজরাত এক সঙ্গে কাজ করলে দারুণ ফল মিলবে।’’ এক শিল্পকর্তার রসিক মন্তব্য, ‘‘আদানির মুখে ‘দিদি’ ডাকের পরে সে বিষয়ে আর সন্দেহ থাকে কী?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement