প্রণবকে (চিহ্নিত) নিয়ে চারঘাট থানার পুলিশকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র
ধৃত মৎস্যজীবী প্রণব মণ্ডলের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের মামলা করল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। নিষিদ্ধ ‘কারেন্ট জাল’ দিয়ে মাছ ধরার অভিযোগে আরও একটি মামলা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। শুক্রবার সকালে বাংলাদেশের আদালতে হাজির করানোর পরে প্রণবকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। রাজশাহির চারঘাট থানার পুলিশ জানিয়েছে, সুস্থ আছেন তিনি।
হেড কনস্টেবল বিজয়ভান সিংহের মৃত্যুর ঘটনায় মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি থানায় বিজিবি-র বিরুদ্ধে খুনের মামলা করেছে বিএসএফ। বৃহস্পতিবার পদ্মায় আন্তর্জাতিক জলসীমায় প্রণব ও তাঁর সঙ্গী দুই মৎস্যজীবীকে আটক করা নিয়ে বিজিবি-র সঙ্গে গোলমাল বাধে বিএসএফের। সঙ্গী দুই ধীবর ফিরতে পারলেও প্রণবকে ছাড়েনি বিজিবি। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে বিজয়ভান মারা যান বলে অভিযোগ। গুলিবিদ্ধ হন বিএসএফের আরও এক জওয়ান। যদিও গত কাল পর্যন্ত বিজিবি বলেছে, তারা শূন্যে গুলি চালিয়েছিল। কোনও মৃত্যু সম্পর্কে তারা নিশ্চিত নয়। বিজিবি-র স্থানীয় কমান্ডার ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ অবশ্য বলেছেন, ‘‘এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তা অনভিপ্রেত এবং দুঃখজনক।’’
বিএসএফ ও বিজিবি-র মধ্যে পুরনো টানাপড়েনের জেরেই গত কালের ঘটনা ঘটেছে বলে অনেকের মত। সূত্রের বক্তব্য, দিন পনেরো আগে চারঘাট এলাকা থেকে আসা মৎস্যজীবীদের একটি নৌকা আটক করেছিল জলঙ্গির চর কাকমারি ক্যাম্পের বিএসএফ। সেই নৌকা ফেরত চেয়ে পরের দিনই
বিজিবি-র চিঠি নিয়ে বাংলাদেশের দু’জন মৎস্যজীবী কাকমারি ক্যাম্পে এসে নৌকা ফেরতের আবেদন জানান। তাতে সাড়া দেয়নি বিএসএফ। এর পরে দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে তিক্ততা এতটাই বাড়ে যে, বিজয়ার মিষ্টি-বিনিময়ও বন্ধ ছিল। স্থানীয় ধীবরদের দাবি, বিএসএফ নৌকাটা ছেড়ে দিলে জল এত দূর গড়াত না।
এ দিন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘‘রাজশাহি সীমান্তে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে আমরা মর্মাহত।’’ তাঁর বক্তব্য, বিএসএফ প্রথমে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে সাড়া দেয়নি। ভুল বোঝাবুঝির কারণে গুলি চলেছে। তবে দুই বাহিনীর প্রধানের মধ্যে কথা হয়েছে। প্রয়োজনে দু’পক্ষ আলোচনাতেও বসবে।
বিএসএফের প্রশ্ন, প্রণবরা জলসীমা পেরিয়ে থাকলে বিজিবি তাঁদের বার করে দিল না কেন? তা ছাড়া, বিজিবি দুই মৎস্যজীবীকে দিয়ে ডেকে পাঠানোর পরে বিএসএফ যে স্পিডবোট নিয়ে গিয়েছিল, তাতে গোলাপি পতাকা ছিল। একমাত্র ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে যাওয়ার সময়ে এই পতাকা থাকে। ফলে, বিএসএফ যে আলোচনার জন্য গিয়েছিল তা স্পষ্ট। বিএসএফ জওয়ানরা হাফপ্যান্ট পরে ছিলেন বলে বিজিবি অভিযোগ তুলেছে। কিন্তু সীমান্তে নদী থাকলে সাঁতারের সুবিধার জন্য জওয়ানেরা প্রায়ই হাফপ্যান্ট পরে থাকেন। বিজিবি-র অভিযোগ, ৬ থেকে ৮ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে বিএসএফ। ভারতীয় বাহিনীর প্রশ্ন, সে ক্ষেত্রে বিজিবি-র কেউ আহত হলেন না কেন?
কাকমারি চর এখন সুনসান। স্থানীয় ধীবররা বলছেন, এই সময় ইলিশের দেখা মেলে। অনেকেই জমি বন্ধক রেখে কিংবা সুদে টাকা ধার নিয়ে জাল ও নৌকা কিনেছেন। আপাতত সবই অনিশ্চিত। প্রণবের স্ত্রী রেখা মণ্ডল শুক্রবারও বিএসএফ ক্যাম্পে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে বৃদ্ধা শাশুড়ি ও চার ছেলেমেয়ে। স্বামীকে ফিরিয়ে আনুন। কথা দিচ্ছি, আর ওকে পদ্মায় নামতে দেব না।’’
সহ-প্রতিবেদন: সুনন্দ ঘোষ