এখনও পাতে নেই ইলিশ, হা-হুতাশ বাঙালির

প্রতি বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১৬ জুন মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য দফতর।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৯ ০২:৩৪
Share:

ক্যালেন্ডারে আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণ। অথচ খর রোদ দেখলে মনে হতে বাধ্য, ঘোর গ্রীষ্ম! বরুণদেব এখনও সদয় হননি বঙ্গের প্রতি। ফলত বৃষ্টি-ভাগ্যে শিকে না ছেঁড়ায় দেখা মিলছে না ইলিশেরও। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তা-ও হিমঘরে মজুত থাকা মাছ। স্বাদও তেমন নেই। বাধ্য হয়ে অন্য মাছ কিনে থলি হাতে বাড়ি ফিরছেন ইলিশপ্রেমীরা।

Advertisement

শ্রাবণ এসে গেলেও জলের রুপোলি শস্যের দেখা মিলছে না কেন? এর জন্য মূলত আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাকেই দায়ী করছেন মৎস্যবিজ্ঞানী থেকে গবেষকেরা। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মূলত পুবালি হাওয়া ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি— এই দুই হল ইলিশ আসার অনুকূল পরিবেশ। এমন আবহাওয়ায় ইলিশের ঝাঁক উল্টো সাঁতার দিয়ে নদীতে এসে ডিম পাড়ে। মৎস্যবিজ্ঞানী অমলেশ চৌধুরীর পর্যবেক্ষণ, ‘‘টানা এক মাস বৃষ্টি নেই। দেখা নেই পুবালি হাওয়ারও। ফলে ইলিশও উঠছে না।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘পরিসংখ্যান বলছে, দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি ৪৭ শতাংশ। সব মিলিয়ে ইলিশ ধরার অনুকূল পরিবেশই তৈরি হয়নি।’’ কেন্দ্রীয় নোনা জলজীবন অনুসন্ধান সংস্থার শিক্ষক গৌরাঙ্গ বিশ্বাসও ভরা মরসুমে ইলিশের আকালের জন্য আবহাওয়ার পরিবর্তনকে দায়ী করছেন। তিনি বলেন, ‘‘বর্ষা দেরিতে আসায় গত বছর অক্টোবরে জেলেদের জালে ইলিশ উঠেছিল। এ বারও তা-ই হবে বলে মনে হচ্ছে।’’

প্রতি বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১৬ জুন মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য দফতর। সেই সময়সীমা পেরোনোর পরে গত ১৭ জুন কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, নামখানা, দিঘা থেকে গভীর সমুদ্রে ট্রলার নিয়ে গিয়েছেন মৎস্যজীবীরা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাঁদের জালে ইলিশ ওঠেনি। রাজ্যে ইলিশ আমদানিকারী সংস্থার সভাপতি অতুলচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘অন্য বছর জুনের শেষ থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ওঠে। কিন্তু এ বার ছবিটা সম্পূর্ণ উল্টো। আমাদের ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।’’ মূলত কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গবাসী ইলিশের জন্য চেয়ে থাকেন নামখানা, ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ, দিঘার দিকে। অথচ, সেই সব জায়গা থেকে ইলিশ তো আসছেই না, উপরন্তু আমদানি বন্ধ বাংলাদেশ থেকেও। ফলে হাপিত্যেশ করে আছেন আপামর ইলিশপ্রেমী।

Advertisement

এমন পরিস্থিতি শেষ কবে হয়েছে, মনে করতে পারছেন না মানিকতলার মাছ ব্যবসায়ী প্রদীপ মণ্ডল বা ডায়মন্ড হারবারের মাছের আড়তদার বিজয় সিংহেরা। বিজয় বলেন, ‘‘গত দু’বছর এমন দেখিনি। শ্রাবণ পড়লেও ইলিশ এল না!’’ কাকদ্বীপের মৎস্যজীবী শ্যামল দাস বলেন, ‘‘আমাদের ভাগ্যটাই মন্দ। জুনের শেষ থেকে ট্রলার নিয়ে গেলেও ইলিশ উঠল না।’’

যদিও এই আকালে চিন্তিত নন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘বৃষ্টি পড়লেই ইলিশ আসবে। সম্প্রতি বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, ইলিশ উৎপাদনে রাজ্য শুধু স্বাবলম্বীই হবে না। বিশ্বের অন্যত্রও তারা ইলিশ সরবরাহ রফতানি করবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পুকুরে ইলিশ চাষ শুরু হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement