নিয়োগ দুর্নীতি কোটিপতি হয়েছিলেন অয়নও। ফাইল চিত্র।
চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েই কোটিপতি হয়ে গিয়েছিলেন হুগলির ব্যবসায়ী অয়ন শীল! শুধু তা-ই নয়, প্রতিশ্রুতিমতো নাকি চাকরি পাইয়েও দিয়েছিলেন অনেককে। ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে, তৃণমূলের বহিষ্কৃত নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এই অয়ন চাকরিপ্রার্থীদের থেকে তুলেছিলেন ৩৫ কোটিরও বেশি টাকা। আর এই পুরো টাকাটাই তাঁর হাতে আসে বিভিন্ন পুরসভার চাকরি আগাম ‘বিক্রি’ করে।
সল্টলেকে অয়নের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে এই সমস্ত তথ্য তদন্তকারীদের হাতে এসেছে বলে ইডি সূত্রে খবর। ওই অফিসে প্রচুর পরিমাণে পুরসভার পরীক্ষার আসল ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র পাওয়া গিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে ওই সূত্র মারফৎ। প্রাথমিক তদন্তে এ কথাও জানা গিয়েছে যে, ওএমআর সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য টেন্ডার পেয়েছিল অয়নের সংস্থা এবিএস ইনফোজেন। তার মধ্যে ওএমআর শিট মূল্যায়নের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল তাদের। তদন্তকারীদের অনুমান, এর ফলে উত্তরপত্রে কারচুপি করার কাজ সহজেই করতে পারতেন অয়ন। যেহেতু উত্তরপত্র মূল্যায়নের ভার তাঁর সংস্থার হাতে ছিল, তাই সহজেই নম্বর বাড়িয়ে অথবা কমিয়ে অযোগ্য প্রার্থীদের সুযোগ করে দিয়ে যোগ্যদের বঞ্চিত করা অয়নের সংস্থার কাছে ছিল বাঁ হাতের খেলা। ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে, এ ভাবে অন্তত সাড়ে পাঁচ থেকে ছ’হাজার নিয়োগ হয়েছে অয়নের মাধ্যমে।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা যাচ্ছে, চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ন্যুনতম ৪ লক্ষ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৭-৮ লক্ষ টাকা নিতেন অয়ন। পুরসভার শ্রমিক থেকে শুরু করে সমস্ত স্তরের নিয়োগকেই প্রভাবিত করতে পারবেন বলে চাকরি প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা আদায় করতেন তিনি। তবে দাম নির্ধারিত হত চাকরির মর্যাদা অনুসারে। এ ভাবেই পরীক্ষার খাতায় কারচুপি করে অয়ন কোটি কোটি টাকা তুলেছিলেন বলে ইডি সূত্রে খবর।
নিয়োগ দুর্নীতিতে এর আগে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের একাধিক বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল ৪৮ কোটি নগদ টাকা। পরে তদন্তে নেমে ইডি আদালতকে জানায় রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির অঙ্কটা বেশ কয়েকশো কোটির। ক্রমেই রাজ্যের বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য, হুগলির তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু নাম জড়ায় নিয়োগ দুর্নীতিতে। শান্তনুর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসাবেই এর পর প্রকাশ্যে আসে অয়নের নাম।