সন্দেশখালিতে মহিলাদের বিক্ষোভ প্রকাশ। — নিজস্ব চিত্র।
সন্দেশখালিতে মহিলাদের অভিযোগ নিয়ে তদন্তের জন্য ১০ সদস্যের দল গঠন করল রাজ্য পুলিশ। দলের মাথায় থাকবেন ডিআইজি পদমর্যাদার এক জন মহিলা অফিসার। সোমবার এ কথা জানালেন বারাসতের ডিআইজি সুমিত কুমার। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, সন্দেশখালিতে কোনও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠেনি। সোমবার সকালেই সন্দেশখালিতে গিয়েছিল রাজ্য মহিলা কমিশন। কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে ‘শ্লীলতাহানি’-র কোনও অভিযোগ তাঁরা পাননি। তার পরেও মহিলাদের অভিযোগ নিয়ে তদন্তের জন্য দল গঠন করেছে রাজ্য পুলিশ।
গত কয়েক দিন ধরে উত্তপ্ত সন্দেশখালি। শাহজাহান শেখ, শিবু সর্দার, উত্তম হাজরাদের গ্রেফতারির দাবিতে যে বিক্ষোভ চলছে। সামনের সারিতে রয়েছেন মহিলারাই। তাঁরা হেনস্থার অভিযোগও তুলেছেন। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই সোমবার সন্দেশখালি গিয়েছিলেন রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্যেরা। তাঁরা মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন। তার পর সাংবাদিকদের লীনা বলেন, ‘‘আমরা গিয়েছিলাম সন্দেশখালি। এখানে আসার আগে শ্লীলতাহানির অভিযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু এখানে এসে এ রকম কাউকে পাইনি, যাঁরা আমাদের সঙ্গে সামনে সেই অভিযোগ করেছেন। জানতে পারলাম, মহিলাদের রাতে ডেকে নিয়ে গিয়ে বাড়ির কাজ, ব্যক্তিগত কাজ করানো হত। শ্লীলতাহানি সংক্রান্ত অভিযোগ আমরা পেলাম না।’’ এর পরেই বারাসতের ডিআইজি সুমিত মহিলাদের অভিযোগ নিয়ে তদন্তের জন্য বিশেষ দল গঠনের কথা ঘোষণা করেন।
গত ৫ জানুয়ারি তৃণমূল নেতা শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সে দিন আক্রান্ত হয়ে ফিরে আসতে হয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের। অভিযোগের আঙুল ওঠে শাহজাহান ‘অনুগামী’-দের দিকে। তার পর থেকে নিখোঁজ শাহজাহান। এর পর একে একে শাহজাহান ঘনিষ্ঠ শিবু, উত্তমদের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়দের একাংশ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বেশ কয়েক জন মহিলা। উত্তমকে গ্রেফতার করা হলেও শাহজাহান, শিবু অধরা। সেই নিয়ে অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শাহজাহান, শিবু, উত্তমদের বিরুদ্ধে সন্দেশখালির গ্রামবাসীদের একাংশ অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের দাবি, গ্রামে জমি জবরদখল করে মাছের ভেড়ি, পোলট্রি খামার তৈরি করেছেন ওই তৃণমূল নেতারা। জোর করে গ্রামবাসীদের দিয়ে নানা কাজ করিয়ে নেওয়া হয়। পরিবর্তে প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। দীর্ঘ দিনের চাপা ক্ষোভ থেকেই শিবুর ফার্ম, বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। তাঁদের গ্রেফতারির দাবিতে ঘেরাও করা হয় থানা।
এর মধ্যেই শিবু ১১৭ জন গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে ভাঙচুর এবং খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। রবিবার সেই অভিযোগের সূত্রে বাঁশদ্রোণী থেকে গ্রেফতার করা হয় সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে। তিনি যদিও উস্কানির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জানিয়েছেন, সন্দেশখালিতে যে সময় অশান্তি হয়েছে, সে সময় তিনি অন্য জায়গায় ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে সোমবার সন্দেশখালি যান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেখানে যাওয়ার পথে আটক হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি বিধায়কেরা। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার দুই বিধায়ক পার্থ ভৌমিক ও নারায়ণ গোস্বামী যাবেন শাহজাহান-গড় সন্দেশখালিতে। পার্থ রাজ্যের সেচমন্ত্রী এবং নারায়ণ জেলা পরিষদের সভাধিপতি।