জঙ্গলমহলে খারাপ ফলের জন্য গুরুতর খামতির কথা উঠেছে তৃণমূলের অন্দরে। জনসংযোগ ছিন্ন হওয়ার কারণেই কি এই ধাক্কা? বিজেপির ভোটবৃদ্ধি নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যেই দলের প্রবীন নেতা তথা মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন। তাঁর মতে, দল এবং জনগণের মধ্যে বোঝাপড়ায় ত্রুটি ছিল। তিনি মনে করেন, মানুষের ক্ষোভ থাকলেও, তা সরকারের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়নি। স্বস্তিদায়ক ব্যবধানে জেলা পরিষদ হাতে পেলেও পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে ক্ষতি হয়েছে শাসকদলের। রাস্তাঘাট, পানীয় জল, ১০০ দিনের কাজ বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় শুরু নতুন প্রকল্পগুলির সুবিধা কেন দল পায়নি, তা নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। এ দিন শোভনদেববাবু বলেন, ‘‘ইংরেজিতে একটা কথা আছে, পার্টি পিপল পার্টনারশিপ। দল ও জনগণের মধ্যে মৈত্রী। এই পার্টনারশিপে কোথাও কিছু ত্রুটি ছিল আমাদের।’’ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘সাংগঠনিক স্তরে আলোচনায় দুর্বলতা বোঝা যাবে।’’
দলের একাংশ মনে করছে, সরকারি প্রকল্প সর্বত্র ঠিক রূপায়ণ হয়নি। নবান্ন থেকে বরাদ্দ অর্থের পূর্ণসদ্ব্যবহার হয়নি কিছু জায়গায়। সেই সূত্রেই শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্বকে দায়ী করে ভোট দিয়েছেন অনেকে। সেটাই তাঁদের বিরুদ্ধে গিয়েছে বলেও মনে করছেন তাঁরা। নেতৃত্বের দুর্বলতার সুযোগেও বিপুল অর্থ খরচ করে এখানে বিজেপি সফল হয়েছে বলে মত দলেরই আর এক অংশের। দলের তরফে আগামী সপ্তাহে ঝাড়গ্রামে সাংগঠনিক বৈঠক করবেন পার্থ। তার আগে শোভনদেববাবু সেই সাংগঠনিক খামতির দিকেই আঙুল তুলেছেন। মেদিনীপুরে দফতরের একটি প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে এসে বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেন, ‘‘সরকারের সাফল্য মানুষের কাছে নিয়ে যাব, আর মানুষের ক্ষোভের কথা সরকারের কাছে নিয়ে যাব— এটাই দলের কাজ। এর মধ্যে কোথাও নিশ্চয়ই দুর্বলতা ছিল। তাই জঙ্গলমহলে এটা হয়েছে।’’ সে কথা মাথায় রেখেই বিদ্যুৎ দফতরের কাজকর্ম পর্যালোচনা করতেই এ দিন মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে বৈঠক করেছেন তিনি।
পুরুলিয়ার ফল দেখে সাংগঠনিক তৎপরতায় খামতির ব্যাপারে শাসকদল নিশ্চিত। সংগঠনের রদবদল নিয়ে কথা শুরু হয়েছে। এক নেতার কথায়, ‘‘যে সব জায়গায় ক্ষতি হয়েছে, সেখানে দল ও প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব আলাদা করা যায় কি না, তা-ও ভাবা হচ্ছে।’’ লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে এখানে সাংগঠনিক দায়িত্বে নতুন মুখের ভাবছে রয়েছে দলের রাজ্য নেতৃত্বের।