মানস ভুঁইয়া
গত পঞ্চায়েত ভোটের দিনের সকাল। সবে ভোট শুরু হয়েছে। সবং থেকে সোজা পশ্চিম মেদিনীপুরের তৎকালীন জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তকে ফোন মানস ভুঁইয়ার। তিনি তখন সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক। ফোনে মানসবাবুর নালিশ, ‘‘এখনই ভোটের লাইনে হামলা হচ্ছে। এ সব কী চলছে? ভোটারদের রক্ষা করুন।’’
বেলা ১টা গড়াতে আবার মানসবাবুর ফোন তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডেকে। তাঁর কাছেও একগুচ্ছ নালিশ। ফলস্বরূপ অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী এসেছিল সবংয়ে।
যত দিন বিরোধী ছিলেন মানস ভুঁইয়া, ভোটের সময় তাঁর নালিশের বহর সামলাতে হিমশিম খেতে হত জেলা প্রশাসনের কর্তাদের। সেই মানসবাবুই এখন শাসকদলের সাংসদ। এবং পরিসংখ্যান বলছে, এ বার পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়নের সময় বিস্তর হাঙ্গামা সত্ত্বেও খাতায়কলমে জমা পড়া অভিযোগের সংখ্যা নেহাতই হাতেগোনা।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের এক সূত্রের খবর, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের সময় যে ৩৫০-৪০০ অভিযোগ এসেছিল, তার একটা বড় অংশই করেছিলেন মানসবাবু। এ বার সেখানে এখনও পর্যন্ত মোটে ৩১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। ভোট নালিশে ভাটার ব্যাখ্যা দিয়ে জেলার বাম নেতা সন্তোষ রাণা বলছেন, “এখন অভিযোগ করতে যাওয়াও কঠিন। পুলিশ-প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট। অভিযোগকারীকেই আসামী সাজিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে।” বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায়েরও দাবি, “অভিযোগ করার মতো পরিবেশ সব এলাকায় নেই।”
ভোট এলেই অভিযোগ নথিভুক্তির জন্য জেলায় পৃথক ‘কমপ্লেন সেল’ খোলা হয়। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক মনে করালেন, মানসবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে গত পঞ্চায়েত ভোটে সবংয়ের তিনটি বুথে পুনর্নির্বাচন করতে হয়েছিল। ভোট পর্বে বরাবর নাছোড় মানসবাবু। নব্বইয়ের দশকের শেষে বাম সমর্থিত প্রার্থী মাখনলাল বাঙালের কাছে একবার হেরে গিয়েছিলেন তিন। গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোটের ফলকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যান তিনি। আদালতের রায়ে মানসবাবু জিতেও যান।
সেই মানসবাবু বছর দেড়েক আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তারপর রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন। আর তাঁর স্ত্রী গীতা ভুঁইয়া সবংয়ের তৃণমূল বিধায়ক। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বার পঞ্চায়েত ভোটে এখনও পর্যন্ত মানসবাবুর কোনও জমা পড়েনি।
আগে তো প্রচুর নালিশ জানাতেন? মানসবাবু বলছেন, “সেই ১৯৮২ সাল থেকে দেখেছি সিপিএম গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। তাই যখনই দেখেছি সংবিধানকে মান্যতা দেওয়া হচ্ছে না, সরব হয়েছি।’’ আর এখন? সাংসদের জবাব, ‘‘এখন আমি তৃণমূলের সৈনিক। এখন নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন নির্ভীক ভাবে কাজ করছে।”