পঞ্চায়েত ভোটের হিংসা নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে কোনও মামলার শুনানির প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
পঞ্চায়েত ভোটের নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হয়েছে সোমবার বিকেল ৫টায়। কিন্তু অনেক বুথেই ভোটারদের লাইন ছিল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত। এই অবস্থাতেই এ দিন সকালে কলকাতা হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে হাজির হন সিপিএম এবং পিডিএস-এর আইনজীবীরা। তাঁরা আদালতে বিভিন্ন খবরের কাগজ পেশ করতে চান এবং ভোটের হিংসা সংক্রান্ত খবর উল্লেখ করেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ তাঁদের জানায়, খবরের কাগজে প্রকাশিত সংবাদ আদালতের কাছে গ্রাহ্য নথি বা প্রমাণ নয়। সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে যদি আদালতে হলফনামা দিয়ে কোনও তথ্য পেশ হয়, তবেই তা গ্রাহ্য হতে পারে। যাঁরা হিংসার বলি হয়েছেন, তাঁদের সঠিক ঠিকানা, পরিচয় জানা দরকার। জানা দরকার, তাঁদের মৃত্যুর সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের যোগাযোগ রয়েছে কি না, কী ভাবে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে, মৃত্যুর জন্য কারা দায়ী, কাদের গাফিলতিতে তাঁরা মারা গিয়েছেন। সুতরাং, আইজীবীদের উচিত ঘটনার সরেজমিন অনুসন্ধান করে তবেই মামলা দায়ের করা। সে ক্ষেত্রে গরমের ছুটির পরে মামলা শোনা যেতে পারে।
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে এত দিন মামলা করে এসেছেন সিপিএমের বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনিও ডিভিশন বেঞ্চের ওই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত। তিনি বলেন, ‘‘সঠিক ও পুরো তথ্য ছাড়া তাড়াহুড়ো করে মামলা দায়ের করা উচিত নয়। আর রাতারাতি সব তথ্য জোগাড় করাও সম্ভব নয়।’’
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এ ভাবে সিপিএম এবং পি়ডিএস-কে ফিরিয়ে দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, তারা অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো করে আদালতে যাওয়ায় তাদের ঘরের অপ্রস্তুত, অগোছালো চেহারাটাই কি সামনে এল না? সিপিএম এবং পিডিএসের অবশ্য ব্যাখ্যা, সোমবার ভোটের চেহারা দেখে শুধু তারাই নয়, সব বিরোধী দল এবং সাধারণ মানুষই উদ্বিগ্ন। কিন্তু দলগত ভাবে তারা আদালতে যায়নি। কয়েক জন আইনজীবী ব্যক্তিগত ভাবে আদালতে গিয়েছেন। তাঁদের কেউ সিপিএম, কেউ পিডিএস-পন্থী।
সোমবার ভোট চলাকালীন হিংসা আটকাতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের হস্তক্ষেপ চান আইনজীবী সুপ্রদীপ রায়। তিনি এ নিয়ে মামলা করারও অনুমতি চান। ডিভিশন বেঞ্চ তাঁকেও নির্দেশ দিয়েছে, সরেজমিন অনুসন্ধান করে তথ্য জোগাড়ের পরে তবেই মামলা দায়ের করতে।
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন জানিয়েছেন, তাঁরা আপাতত পঞ্চায়েত ভোটের হিংসা এবং বুথ দখল নিয়ে কোনও মামলা করছেন না। ভোটের ফল প্রকাশের পর দলে আলোচনা করে তাঁরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আগামী ৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে দলের বক্তব্য জানানো হবে।