তিনি জিতলেন, হেরে গেলেন এবং ফের জিতলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শেষ বিকেল— সাড়ে তিন ঘণ্টার এই টান টান ওঠা-পড়ার মাঝে গণনা কেন্দ্র জুড়ে দাপাদাপি করলেন তৃণমূল কর্মীরা। আর, কান্দি রাজ কলেজের গণনা কেন্দ্রের দেওয়াল ঘেঁষে পড়ল বোমা। উর্দিধারীরা কখনও রইলেন নির্বিকার দর্শকের ভূমিকায়, কখনও বা তেড়ে গেলেন চাক-বাঁধা বিরোধী-প্রতিরোধের দিকে।
মুর্শিদাবাদের ভরতপুর পঞ্চায়েতে কংগ্রেস-তৃণমূলের সমানে সমানে টক্করের পরে শেষ হাসিটা থমকে গিয়েছিল ৮০ নম্বর বুথের সামনে। ওই বুথের ফলাফলের উপরেই থমকে ছিল জয়-পরাজয়। ব্যালট খুলে মিনিট পনেরোর গুনতি শেষে দেখা গেল, কংগ্রেস প্রার্থী আনসার আলি পেয়েছেন ২৬৪টি ভোট। আর সামান্য দূরে থমকে গিয়েছেন তৃণমূলের পার্থ সূত্রধর, ২৫৭ ভোট।
সব লড়াই শেষ, ‘জয়ী হয়েছেন আনসার।’ ঘোষণা হতেই ছবিটা দ্রুত বদলে যেতে থাকে। হইহই করে গণনা কেন্দ্রে ঢুকে পড়ে এক দল যুবক। অভিযোগ তারা সকলেই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক। কংগ্রেসের অভিযোগ, ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে এলোমেলো করে দিয়ে তারা পুনর্গণনার দাবি তুলে তাণ্ডব শুরু করে। ভোট কর্মীরা এ ওর মুখ চাওয়াচায়ি করে সেই ‘নির্দেশ’ পালন করেন। আর তাতেই কেল্লাফতে! মিনিট দশেকের মধ্যেই দেখা যায় তৃণমূলের পার্থ এগিয়ে গিয়েছেন ১৪ ভোটে। কী করে হল?
আরও পড়ুন: গণনা চলছে, বুথে ঢুকে পড়ে মারা হল ছাপ্পা
খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই কংগ্রেসের সমর্থক এবং আনসারের গ্রামের লোকজন শুরু করেন বিক্ষোভ। সেই আঁচ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে আশপাশের গ্রামেও। ব্যাপারটা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে এ বার অগিয়ে আসেন ভরতপুরের স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। ভোট-কর্মীদের রাজি করিয়ে ফের ‘নিরপেক্ষ’ ভাবে গণনা করতে বলেন তাঁরা। ফের গুনতি, এবং মিনিট পনেরোর অপেক্ষা শেষে ঘোষণা— ‘কংগ্রেসের আনসার আলি সাত ভোটে জয়ী হয়েছেন।’
যা দেখে ভরতপুরের কংগ্রেস বিধায়ক কমলেশ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘নির্বাচনের নামে কী নির্লজ্জ প্রহসন চলছে দেখছেন তো!’’ আর ভরতপুর ব্লকের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি নজরুল ইসলাম দায়সারা গলায় বলছেন, ‘‘এতে অবাক হওয়ার আছেটা কী! সাত ভোটের ব্যবধান দেখে আমরা ফের গণনার দাবি জানিয়েছিলেম, ভোট কর্মীরা গুনতে ভুল করেছিলেন বোধহয়, তাই দু’রকম ফল হয়েছিল।’’