Panchayat Poll 2018

গণপ্রতিরোধেই বাম সলতে জ্বাললেন শাহিদ

বাংলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার পথিকৃৎ যারা, সেই বামেদের এ বার জেলা পরিষদে সাকুল্যে একটি আসন। তা-ও সিপিএম শূন্য! বাম নেতৃত্ব দৃঢ় ভাবেই মনে করেন, কোথাও কোনও জেলা পরিষদ আসন জেতার ক্ষমতা তাঁদের নেই, এমন দুরবস্থা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৮ ০৩:৫৫
Share:

মহম্মদ শাহিদ সিদ্দিকী।

তিনি না থাকলে বলে দেওয়া যেত, অস্তিত্বই বিলীন! কিন্তু বুথ দখল, বোমা-বাজি, পুনর্নির্বাচন, গণনায় লুটের অভিযোগ— এ সবের মধ্যেও তিনি আছেন। তাঁর দৌলতেই এ বার গোটা রাজ্যের জেলা পরিষদে নামমাত্র অস্তিত্ব বজায় রাখতে পেরেছে বামফ্রন্ট!

Advertisement

বহু যুদ্ধের পোড় খাওয়া সৈনিক নন মহম্মদ শাহিদ সিদ্দিকী। আলিগড় থেকে পড়াশোনার পাট সেরে গোয়ালপোখরের ধরমপুর হাইস্কুলে এখন উর্দুর শিক্ষক। চাকুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক আলি ইমরান রামজে্র (ভিক্টর) হাত ধরে দলীয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি মাত্র ৯ মাস আগে। রাজ্যের ২০টি জেলা পরিষদের কোথাও যখন সিপিএমের এক জন প্রার্থীও জয়ের মুখ দেখেননি, ৩২ বছরের শাহিদই তখন উত্তর দিনাজপুর থেকে বামেদের শিবরাত্রির সলতে! ফ ব-র প্রার্থী শাহিদ গোয়ালপোখর-২ ব্লকের বেলন আসন থেকে ১১৫৬ ভোটে জয়ী হয়েছেন জেলা পরিষদে।

বাংলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার পথিকৃৎ যারা, সেই বামেদের এ বার জেলা পরিষদে সাকুল্যে একটি আসন। তা-ও সিপিএম শূন্য! বাম নেতৃত্ব দৃঢ় ভাবেই মনে করেন, কোথাও কোনও জেলা পরিষদ আসন জেতার ক্ষমতা তাঁদের নেই, এমন দুরবস্থা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আসলে তাঁদের জিততে ‘দেওয়া হয়নি’। তার মধ্যেও ব্যতিক্রম কী ভাবে শাহিদ?

Advertisement

আরও পড়ুন: গণনার পরে ভোট

বাম নেতারাই বলছেন, শাহিদের এলাকার পরিস্থিতিও বিশেষ ব্যতিক্রমী ছিল না। হুমকি মোকাবিলা করেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। ভোটের দিন বোমা মেরে, বুথ দখল করে ছাপ্পার অভিযোগ ওঠে। দু’টি বুথে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সেই দু’টির মধ্যে একটি ফ ব জিতেছে, অন্যটিতে তৃণমূল। পঞ্চায়েত সমিতির সাতটি আসনও বামেরা জিতেছে।

শাহিদ বলছেন, ‘‘বিধায়ক ভিক্টরদা’র নেতৃত্বে আমরা লড়াই করেছি। এখানে ৫-৬টা বুথ দখল না হলে জেলা পরিষদে ১০ বছরের তৃণমূল সদস্যের বিরুদ্ধে আরও বেশি ভোটে জিততাম। গণনা কেন্দ্রেও অন্যায় হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় মানুষ সঙ্গে ছিলেন বলে আমরা অন্যায় রুখেও জিততে পেরেছি।’’ ভিক্টরের কথায়, ‘‘স্থানীয় দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে আমরা ১২ মাস সংগঠনকে সচল রেখেছি। বামফ্রন্টের বাইরে কোনও দলের সঙ্গে আঁতাঁত করিনি। ভোটের দিন যতগুলো পেরেছি, বুথ আগলেছি।’’

রায়গঞ্জের সাংসদ এবং সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের দাবি, ‘‘ভাড়াটে দুষ্কৃতীদের বাহিনী ওখানেও হানা দিয়েছিল। কিন্তু সব কিছু তারা লুটে নিতে পারেনি, বাধা পেয়েছে। আশেপাশের আরও কয়েকটি আসন সিপিএম-সহ বামেরা জিতত গণনা ঠিকমতো হলে।’’

লোকসভা ভোটের পরে ২০০৯ সালে রাজ্যে একগুচ্ছ বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে বামেদের তরফে একমাত্র জয়ী হয়েছিলেন ভিক্টর। কলকাতায় তাঁকে ‘চিনিয়ে’ দিয়েছিলেন বিমান বসু। এ বারও বামেদের হতাশার মরুভূমিতে এক টুকরো মরূদ্যান এই সাহিদকে কলকাতার নেতারা চেনেন না। শাহিদের তাই ২৬ মে শহরে এসে বামফ্রন্টের বৈঠকে যাওয়ার কথা। শাহিদ বলে রাখছেন, ‘‘এর পরে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার চাপ আসতে পারে। লড়াই শেষ হয়নি!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement