মালা গলায় কুরবান শাহ। নিজস্ব চিত্র
গলায় রজনীগন্ধার মালা। হাসি মুখে দু’আঙুল তুলে জয়সূচক চিহ্ন দেখাচ্ছেন পাঁশকুড়া ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি কুরবান শাহ। অনুগামী, দলীয় কর্মী, সমর্থকেরা উৎসাহের সঙ্গে তাঁর ছবি তুলেছেন।
দৃশ্যটা কয়েক সপ্তাহ আগের। পাঁশকুড়া ব্লকে পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিশ্চিত ধরেই বিডিও অফিসের সামনে হাসি মুখে ক্যামেরার সামনে পোজ দিয়েছিলেন কুরবান। কিন্তু শুক্রবার হাইকোর্টের রায় শোনার পরে সেই হাসি মুখে ফুটেছে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তার রেখা।
তবে শুধু কুরবান নন, পাঁশকুড়া ব্লকের ২০৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৭৯টি এবং পঞ্চায়েত সমিতির ৪০টি আসনের মধ্যে ১০টি আসনে তৃণমূল প্রার্থীরাও ওই রায়ের পরে নড়ে চড়ে বসেছেন। কারণ, ওই সব আসনগুলিতেও বিরোধী দলের কোনও প্রার্থীর মনোনয়ন জমা পড়েনি। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিশ্চিতই ধরে নিয়েছিলেন তাঁরা।
হাইকোর্টের নির্দেশে আরও একদিন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন প্রার্থীরা। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিশ্চিত ধরা আসনগুলিতে নতুন করে বিরোধীদের প্রার্থীপদে মনোনয়নপত্র জমা পড়ার ফলে সেখানে ভোট গ্রহণ হওয়ার পরিস্থিত তৈরি হচ্ছে। এতেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে শাসকদলের অন্দরে।
অবশ্য প্রকাশ্যে তা মানছেন না শাসকদলের স্থানীয় নেতারা। শনিবার কুরবান বলেন, ‘‘শুধু আমার আসন নয়, পাঁশকুড়া ব্লকের অনেক আসনেই বিরোধীরা প্রার্থীরা দিতে পারেনি। এবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে প্রার্থী দিলেও আমরা ভোটের জন্য প্রস্তুত।’’ উল্লেখ্য, জয় নিশ্চিত ধরে এতদিন কোনও প্রচারই করেননি কুরবান।
তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের ১৫৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ১৭টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের পথ মসৃণ করেছিল তৃণমূল। একইভাবে ৩০টি পঞ্চায়েত সমিতি আসনের মধ্যে ৪টিতে বিরোধী প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি। শনিবার ব্লক তৃণমূলের আহ্বায়ক শরৎ মেট্যার এ নিয়ে বলেন, ‘‘ওইসব আসনে প্রার্থী দিলেও আমাদের জয় আটকানো যাবে না।’’
সিপিএম বিধায়ক ইব্রাহিম আলির অভিযোগ, ‘‘পাঁশকুড়া এবং শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির আসনেই বাম প্রার্থীদের মনোনয়ন জমার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়া যায়নি। এবার ওইসব আসনে মনোনয়ন দেওয়া হবে।’’
এদিকে, দিন বা়ড়লেও এবারও মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন কি না, সে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে হলদিয়া এবং নন্দীগ্রামে। গতবার নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে প্রার্থী পাওয়া যায়নি বলেই বিরোধীরা মনোননয়ন দেয়নি বলে দাবি করেছিলেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাথ পাল। এবার তিনিও ‘অস্বস্তি’তে। যদিও মুখে মেঘনাথবাবু বলেন, ‘‘ওঁরা আগে প্রার্থী খুঁজে পাক। তারপর মনোনয়ন দেবে।’’ উল্লেখ্য, ওই ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪০টির মধ্যে ১২৮টি, পঞ্চায়েত সমিতির ৩০টি আসনে কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেতে চলেছিল শাসকদল।