রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের শুরুতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে একটি পরামর্শ দিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তিনি বলেছিলেন, বাংলার উচিত রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে, উন্নয়নের কথা ভেবে কেন্দ্রের সঙ্গে মিলে কাজ করা। কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারের যে সংঘাত তাতে ইঙ্গিত করেই রাজ্যপালের নিদান ছিল, এতেই বাংলার ভাল হবে। সম্মেলনের শেষে ধনখড়কে এর জবাব দিলেন মমতা। তিনি বললেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে সব রকম সাহায্য আমরাও পেতে চাই। তবে শিল্পপতিদের তরফে রাজ্যপালের কাছেও আমার একটি অনুরোধ আছে। অনুরোধ এই যে, শিল্পপতিদের যেন কেন্দ্রীয় সংস্থা মারফৎ কোনওরকম হেনস্থা না করা হয়। রাজ্যপালও যেন বিষয়টি কেন্দ্রের কানে পৌঁছে দেন।’’
বুধবার বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের প্রথম দিনে বিশ্ববঙ্গ কনভেনশন সেন্টারে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল ধনখড় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সম্মেলনের প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন ধনখড়ই। তবে তাঁকে তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে পাওয়া যায়নি। রাজ্যের সমালোচনার বদলে বরং মমতার প্রশংসাই করতে শোনা যায় ধনখড়কে। মমতার নেতৃত্বে বাংলার শিল্প এবং উন্নয়নের উন্নতির কথাও বলেন তিনি। তবে শেষে কেন্দ্র –রাজ্য সংঘাতের কথা মনে করিয়ে দিতেও ভোলেননি। সেই সূত্রেই উঠে আসে কেন্দ্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজ্য় সরকারের কাজ করার প্রসঙ্গ। যার জবাব সরাসরি না দিলেও মমতা তাঁর বক্তৃতার শেষে বুঝিয়ে দেন রাজ্যপাল কেন্দ্রের সাহায্যের কথা বললেও কেন্দ্রের হেনস্থার কথা ভোলেননি তিনি।
মমতা ধনখড়কে বলেন, ‘‘সমস্ত শিল্পপতিদের তরফে রাজ্যপাল আমার একটিই অনুরোধ। এককথায়।’’ হাত জোর করে রাজ্যপালকে মমতা এরপর বলেন, ‘‘ওঁরা (শিল্পপতিরা) মুখ খুলতে পারবেন না। আমরাও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে সব রকম সাহায্য পেতে চাই। কিন্তু রাজ্যপাল যেন কেন্দ্রের কানে এই বিষয়টি পৌঁছে দেন যে শিল্পপতিদের যেন কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থা মারফৎ বিরক্ত করা না হয়।’’ বলেই বক্তৃতা শেষ করে মঞ্চ ছাড়েন মমতা। পর্যবেক্ষকদের মতে, এর আগে বাংলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেখা গিয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বকে কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফে পুরনো মামলা সূত্রে তলব করা হয়েছে। শাসকদল এ নিয়ে সরব হয়েছে বহুবার। এমনকি বিধানসভা নির্বাচনের তৃণমূলের জয়ের পর মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং তৃণমূল নেতা মদন মিত্রের বিরুদ্ধেও শুরু হয় ইডির তদন্ত। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, রাজ্যে বিনিয়োগ আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়েও কেন্দ্রীয় সরকার কেন্দ্রীয় সংস্থার সাহায্যে প্রতিকূলতা তৈরি করতে পারে ইঙ্গিত করেই ওই মন্তব্য করেছেন মমতা।