ফাইল চিত্র।
দিনভর টানাপড়েনের পরে শুক্রবার রাতেও জট কাটার ইঙ্গিত মিলল না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নবান্নে এ দিন সন্ধ্যায় শহরের পাঁচ বিশিষ্ট চিকিৎসকের বৈঠক, মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে নবান্নে আন্দোলনকারীদের বৈঠকে আসার প্রস্তাব, এনআরএসে পৌঁছে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে ডিএমই-র দৌত্য— কোনও কিছু থেকেই বেরল না কোনও সমাধান সূত্র। কারণ, আংন্দোলনকারীরা জানিয়ে দিয়েছেন, নবান্নে নয়, মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁদের কাছে গিয়ে বৈঠক করতে হবে। প্রত্যাহার করতে হবে এসএসকেএমে করা তাঁর নানা মন্তব্যও।
যদিও কলকাতার রাস্তায় বিদ্বজ্জন-সহ আন্দোলনকারীদের মিছিলের পরে ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য পরিষেবার জট কাটাতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ দিন সন্ধ্যায় নবান্নে বৈঠকে বসেন শহরের পাঁচ জন প্রবীণ চিকিৎসক। বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে তাঁরা জানান, আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন শহরের পাঁচ বিশিষ্ট চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়, মাখনলাল সাহা, অলকেন্দু ঘোষ, অভিজিৎ চৌধুরী এবং প্লাবন মুখোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, তাঁদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কথা হয়েছে। তাঁরা অচলাবস্থা কাটানোর জন্য আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি আলোচনায় সম্মত হয়েছেন। শনিবার বিকেল ৫টায় আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের চার প্রতিনিধিকে নবান্নে বৈঠকে আহ্বান করেছেন তিনি।
যদিও এ দিন রাতেই আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে তাঁরা নবান্নে যেতে রাজি নন। মুখ্যমন্ত্রীকেই এনআরএসে আসতে হবে। জুনিয়র ডাক্তাররা স্পষ্ট করে দেন, তাঁরা তাঁদের আগের অবস্থান থেকে সরছেন না।
আরও পড়ুন: ডাক্তার নিগ্রহের প্রতিবাদে মিছিল শহরে, জনজোয়ারে শামিল বিদ্বজ্জনরাও
রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা কার্যত ভেঙে পড়ার মুখে। খাতায়কলমে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে জরুরি বিভাগ চালু থাকলেও, স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের নিজস্ব রিপোর্টেই ইঙ্গিত— সবটাই খাতায়কলমে। বাস্তবে হাসপাতালগুলি প্রায় শ্মশানের চেহারা নিয়েছে। খালি কলকাতা শহরের পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন থেকেই পদত্যাগ করেছেন প্রায় ৫০০ চিকিৎসক। গোটা রাজ্য ধরলে সংখ্যাটা হাজার ছুঁই ছুঁই।
আরও পড়ুন: এনআরএস-কাণ্ডে অচলাবস্থা দেশ জুড়ে, মমতাকে চিঠি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের
পরিস্থিতি সামাল দিতে বৃহস্পতিবার থেকেই স্বাস্থ্য ভবনে দফায় দফায় জরুরি বৈঠক করেন শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তারা। শুক্রবার অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (স্বাস্থ্য)-র উপস্থিতিতে দিনভর বৈঠকের শেষে আলোচনার রাস্তা খোলার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেও জানানো হয় গোটা পরিস্থিতি। নবান্ন থেকে আলোচনার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত মেলা মাত্রই তৎপর হয়ে ওঠেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁরা যোগাযোগ করেন বিশিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে।
সূত্রের খবর, যখন শহরের পাঁচ বিশিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে বৈঠক করছেন মুখ্যমন্ত্রী, তখন এনআরএসে হাজির হন ডিএমই প্রদীপ মিত্র। সূত্রের খবর, সেখানে আন্দোলনকারীদের ছ’জন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সেখানে তাঁদের জানানো হয় যে মুখ্যমন্ত্রী কথা বলতে চান। সূত্রের খবর, আন্দোলনকারীরা তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট করার পাশাপাশি এই মুহূর্তে তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে আলোচনা চালাচ্ছেন।
তবে স্বাস্থ্যকর্তারা নানা পর্যায়ে আলোচনার রাস্তা তৈরি হওয়াকে এখনও গুরুত্ব দিচ্ছেন।