বাংলার বিজেপি-র বিধায়কদের পরিষদীয় রাজনীতি হাতে-কলমে শেখাবে দিল্লির একটি বেসরকারি সংস্থা।
বাংলার বিজেপি-র বিধায়কদের পরিষদীয় রাজনীতি হাতে-কলমে শেখাবে দিল্লির একটি বেসরকারি সংস্থা। মঙ্গলবার থেকে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। বিধানসভায় এসে সংস্থাটির অন্যতম কর্তা কথা বলে গিয়েছেন গেরুয়া শিবিরের বিধায়কদের সঙ্গে।
বিজেপি পরিষদীয় দল সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট সংস্থাটির কর্তা মানস গুব্বি মঙ্গলবার বিধায়কদের প্রাথমিক ভাবে বুঝিয়েছেন, কীভাবে, কোন ইস্যুতে, কোন সময়, কী প্রশ্ন করতে হয়। পাশাপাশিই বোঝান, সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরতে বাজেট তথ্যকে কী ভাবে ব্যবহার করতে হয়। আগামী জানুয়ারি মাসে বিধায়কদের দ্বিতীয় ক্লাস নিতে আসবে মানসের সংস্থার এখটি দল। তখন বেশ বড়সড় ভাবেই প্রশিক্ষণ শিবির হবে। রাজ্য বিধানসভার আগামী বাজেট অধিবেশনের আগে ‘নড়বড়ে’ বিধায়কদের ‘সড়গড়’ করে তোলার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ বলে বিজেপি পরিষদীয় দল সূত্রে জানা গিয়েছে।
পাঁচ বিধায়কের দলবদলের পর বিজেপি-র বিধায়ক সংখ্যা এখন ৭০ জন। নির্বাচিত হওয়ার পর গত ছ’মাসে দু’টি অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন বিজেপি বিধায়করা। যে ক’দিন বিধানসভার অধিবেশনে তাঁরা অংশ নিয়েছেন, সে ক’দিনও বেশির ভাগ বিধায়ক কোনও বিতর্কে অংশ নিতে পারেননি অনভিজ্ঞতার কারণে। পরিষদীয় রীতি-নীতি সম্পর্কে ধ্যান-ধারণার অভাবে পরিষদীয় দলকে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে বলেই অভিমত পদ্মশিবিরের এক প্রবীণ বিধায়কের। সেই কারণে এবার অনভিজ্ঞ বিধায়কদের সড়গড় করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই জন্যই দিল্লির ওই বিশেষজ্ঞ সংস্থার উপর ভার দিয়েছেন তাঁরা।
আগামী বছর বাজেট অধিবেশনে বিজেপি পরিষদীয় দলের সদস্যরা যাতে প্রশ্নোত্তর পর্ব, দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব, উল্লেখ পর্ব ইত্যাদি রুটিন বিষয়গুলিতে অংশ নিতে পারেন, ওই সংস্থা সে দিকে নজর রাখবে। সেই মর্মে বিধায়কদের প্রশিক্ষণও দেবে। সর্বোপরি, সরকারপক্ষকে বিধানসভার অন্দরে চেপে ধরার জন্য যে ভাবে তথ্য-পরিসংখ্যান-সহ তৈরি হতে হয়, সে ব্যাপারেও হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হবে। কারণ, এক বিজেপি বিধায়কের কথায়, ‘‘আমাদের প্রায় গোটা পরিষদীয় দলটাই কার্যত নবনির্বাচিত। পরিষদীয় রীতিনীতি দূরের কথা, অনেকে স্থানীয় কোনও ভোটেও এর আগে নির্বাচিত হননি। তাই তাঁদের প্রশিক্ষিত করতে দলের তরফএ এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’’
সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি বিজেপি-র সংসদীয় দলের সঙ্গেও দীর্ঘ দিন ধরে যুক্ত। সাংসদদের কেবল সড়গড় করে তোলাই নয়, যথাসময়ে বিভিন্ন বিষয়ে হাতে তথ্য তুলে দিয়েও সাহায্য করে সংস্থাটি। বিধায়সভার ক্ষেত্রেও তারা একই ভূমিকা পালন করবে।
প্রসঙ্গত, গত দু’টি অধিবেশনে নতুন বিজেপি বিধায়কদের মধ্যে ভাল বক্তৃতা করেন নজর কেড়েছেন বালুরঘাটের বিধায়ক তথা পেশায় অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ি, শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষ, ইংলিশবাজারের বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী এবং কালিম্পংয়ের বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। বাকি পরিষদীয় দলকে টেনেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর সঙ্গে সঙ্গত করেছেন নাটাবাড়ির বিধায়ক মিহির গোস্বামী, মাদারিহাটের বিধায়ক মনোজ টিগ্গারা।
সদ্যসমাপ্ত শীতকালীন অধিবেশনে প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা ময়নার বিজেপি বিধায়ক অশোক ডিন্ডা রাজ্যের পান চাষ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে। জবাবে প্রবীণ রাজনীতিক শোভনদেব জানিয়েছিলেন, ওই বিষয়টি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের অধীন। তাই ওই প্রশ্নের জবাব কৃষি দফতরের কাছে নেই। জবাব শুনে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন অশোক। দু’টি অধিবেশনে এমন আরও কিছু ঘটনা নজরে এসেছিল বিরোধী দলনেতা-সহ পরিষদীয় দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। তাই এ বার হাতেকলমে সরাসরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।