Belur Math

প্রশ্ন করুন মোদীকে, মত মঠের সন্ন্যাসীদের

প্রশ্ন উঠছে, কেনই বা যুব দিবসের অনুষ্ঠানের মঞ্চকে ব্যবহার করতে দেওয়া হল?

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৬:১২
Share:

ছবি: পিটিআই।

জাতীয় যুব দিবসে বেলুড় মঠের মঞ্চ থেকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রচার নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। প্রশ্ন উঠছে, কেনই বা যুব দিবসের অনুষ্ঠানের মঞ্চকে ব্যবহার করতে দেওয়া হল? কিন্তু সঙ্ঘের প্রবীণ সন্ন্যাসীদের কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কী বলবেন, তার উপরে যেমন কারও নিয়ন্ত্রণ নেই, তেমন মাঝপথে তাঁকে থামানো যায় না। আর সাধুরা তো সিএএ নিয়ে তাঁকে বলতে বলেননি। সাধুরা রাজনীতিতে নেই। যদি মনে হয় প্রধানমন্ত্রী ভুল বলেছেন, তা হলে তাঁকে প্রশ্ন করুন। বেলুড় মঠকে কেন টানা হচ্ছে? আর উনি ওই মঞ্চে রাজ্য সরকারকেও তো ধন্যবাদ জানালেন।’’

Advertisement

সূত্রের খবর, চলতি বছরে ভক্তদের আয়োজিত মঠ ও মিশনের পঞ্চদশ অধ্যক্ষ স্বামী আত্মস্থানন্দের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

মোদীর বক্তৃতা প্রসঙ্গে প্রবীণ সন্ন্যাসীদের একাংশ জানাচ্ছেন, কয়েক বছর আগে কোনও এক ‘রাজ্য প্রধান’ মঠের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে যে-বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তাতে রাজনীতির ছোঁয়া ছিল। সন্ন্যাসীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল। মঠ ও মিশন সেই সময়েও সেই ‘প্রধান’কে নিয়ন্ত্রণ করেনি। মাঝপথে বক্তব্যও থামিয়ে দেয়নি। কারণ, সন্ন্যাসীদের মতে, তা ভারতীয় সংস্কৃতি নয়। তাঁদের কথায়, ‘‘সে-দিন কেন প্রশ্ন ওঠেনি? যদিও আমরা এ-সব রাজনীতির মধ্যে থাকতে চাই না। আমরা ঠাকুরের নামে সেবাকাজ করি। তাই নরেন্দ্র মোদী যা বলেছেন, তার মধ্যে কী আছে, জানি না। তবে উনি যাওয়ার পরে যা হচ্ছে, তা আসল রাজনীতি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ধর্নায় উপাচার্যেরা কেন, জোর তরজা মন্ত্রী ও রাজ্যপালে

এ প্রসঙ্গে মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ বলেন, ‘‘১১৫ বছর ধরে বেলুড় মঠ যে জায়গায় ছিল, আগামী দিনেও সেই-জায়গাতেই থাকবে অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে।’’ কিন্তু ‘অরাজনৈতিক’ হয়েও মোদীকে তাঁরা ‘দেশের অন্যতম সেরা প্রধানমন্ত্রী’র স্বীকৃতি দিলেন কী ভাবে? এ ভাবে কি তাঁরা

রাজনীতিতে জড়ালেন না? কোন মাপকাঠিতেই বা এই স্বীকৃতি দেওয়া হল, বিশেষত যে প্রধানমন্ত্রীর আমলে দেশকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের অভিযোগ সব চেয়ে বেশি উঠছে? প্রবীণ সন্ন্যাসীদের মতে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের রেকর্ড দেখেই মোদী সম্পর্কে ওই কথাটি স্বাগত ভাষণে বলেছিলেন সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক।

প্রবীণ সন্ন্যাসীদের কথায়, ‘‘নেহরুর পরে আর কোনও প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় বার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসেননি। নিশ্চয় কাজকর্মের ভিত্তিতেই তাঁকে আগের থেকেও বেশি লোক দ্বিতীয় বার সমর্থন করেছেন। নাগরিক হিসেবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিসংখ্যান ও তথ্যের উপরে ভিত্তি করে ওই কথা বলা হয়েছে।’’

মঠের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী নিজে বেলুড়ে এসে রাত্রিবাস করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তা-ই বলে তাঁকে যুব দিবসের সভায় বক্তৃতার সুযোগ কেন দেওয়া হবে? প্রবীণ সন্ন্যাসীরা বলছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যখন বেলুড় মঠে রয়েছেন, তখন কি তাঁকে বলা যায়, আপনি ঘরে থাকুন, আমাদের একটা অনুষ্ঠান আছে, সেখানে আপনি যাবেন না। তাই ওই অনুষ্ঠানে ওঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী না-হয়ে যদি কোনও রাজ্যের সরকারের প্রধান থাকতেন, তা হলে তাঁকেও আমন্ত্রণ জানানো হত। আমন্ত্রণ না-জানানো কি ভদ্রতার পরিচয় হত?’’

প্রবীণ সন্ন্যাসীদের একাংশ আরও জানাচ্ছেন, কারও রাজনৈতিক পরিচয় দেখে মঠে ডাকা হয় না। শ্রীরামকৃষ্ণ, মা সারদা ও স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত হিসেবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পদাধিকারকে সম্মান জানিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আর রামকৃষ্ণ মিশন স্বশাসিত সংস্থা। তাই কাকে ডাকা হবে, সেটা মঠের নিজস্ব বিষয়।

স্বামী সুবীরানন্দ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক নিজেদের স্বার্থে নয়, দেশের গরিব মানুষগুলির জন্যই রাখতে হয়। মিশনের আদর্শ সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা। সেই কাজ করা হয় বিনামূল্যে। সেই কাজের জন্যই সম্পর্ক রাখতে হয়।’’

তা না-হয় হল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তো সিএএ-র পক্ষে প্রচার করে গেলেন। সন্ন্যাসীদের সঙ্গে ছবি তুলে টুইটও করলেন। অতীতেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীরা মঠে গিয়েছেন, কিন্তু ছবি তুলে এমন বিপুল প্রচার হয়নি। তা কেন করতে দেওয়া হল?

প্রবীণ সন্ন্যাসীদের একাংশের দাবি, ‘‘ছবি পোস্ট করা মোদীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আর সাধুরা ভোট দেন না। তাই কোনও পদাধিকারীর সঙ্গে ছবি থাকা মানে এই নয় যে, তাতে সাধুদের সুবিধে হবে, বা সাধুরা তাঁর সঙ্গে রয়েছেন।’’

কিন্তু মোদীকে প্রচারের সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ কি মঠকে অস্বস্তিতে ফেলছে না? সন্ন্যাসীরা জানাচ্ছেন, কংগ্রেসের আমলে মঠকে ‘কংগ্রেসের দালাল’ বলা হত। আবার জ্যোতি বসু মঠে আসতেন বলে প্রশ্ন উঠেছিল, সন্ন্যাসীরা কমিউনিস্ট হয়ে গেলেন কি না? তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে বলা শুরু হল, মঠ শাসক দলের ঘনিষ্ঠ। আবার মোদীর সফরের পরে অন্য কিছু ভাবা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement