আগের দু’বারেই তৃণমূলের সঙ্গে জুড়েছে ন্যাড়া-কাণ্ড। — ফাইল চিত্র।
কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা কৌস্তুভ বাগচী গ্রেফতার হওয়া থেকে জামিন পাওয়া পর্যন্ত অনেক বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু এখন আলোচনায় জামিন পাওয়ার পরে কৌস্তুভের মাথা মুড়িয়ে ফেলার ঘটনা। ন্যাড়া হওয়ার কারণ জানিয়ে, কৌস্তুভ শনিবার জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতাচ্যুত না করা পর্যন্ত তিনি মাথায় চুল রাখবেন না।
এই ঘটনায় রাজ্য রাজনীতির মনে পড়ছে আরও ৩টি ঘটনার কথা। ২টিতে ঘটনায় শিরোনামে আসারা ন্যাড়া হয়েছিলেন। একজন আবার প্রথমবার ন্যাড়া হলেও পরে ঘোষণার পরেও পিছিয়ে আসেন। তবে সব ক্ষেত্রেই নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের। আরও স্পষ্ট করে বললে মুখ্যমন্ত্রী মমতার।
প্রথম ঘটনা ২০২০ সালের। সে বার শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার মাথা মুণ্ডন করে বিষ্ণুপুরে ষাঁড়েশ্বর মহাদেবের পুজো ও যজ্ঞ করেছিলেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। শপথ নিয়েছিলেন, সরকার থেকে তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতাচ্যুত করবেন। সেই সময়ে যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি কর্মীদের হাতে হাতে ত্রিশূল তুলে দেওয়াও শুরু করেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ৯০ হাজার ত্রিশূল বিলি করবেন। তবে বিজেপি সেই সময় সৌমিত্রকে সমর্থন করেনি। পরে সেই কর্মসূচি বাতিল হয়ে যায়।
বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ এবং তখন বিজেপি বিধায়ক আশিস দাস। — ফাইল চিত্র।
এর পরে সৌমিত্রের চুল গজায়। কিন্তু ২০২১ সালে ফের একবার ন্যাড়া হতে গিয়েছিলেন সৌমিত্র। শেষে অবশ্য দলীয় নেতৃত্বের ধমকে নরসুন্দরের কাছে মাথা কামাতে যাননি তিনি। যুক্তি অবশ্য অন্য দিয়েছিলেন।
বিধানসভা নির্বাচনের পরে বিজেপির টিকিটে জয়ী মুকুল রায় তৃণমূলে ফিরে যান। তার পরেই সৌমিত্র বলেন, ‘‘মোদীজিকে সঙ্গে নিয়ে সোনার বাংলা তৈরির অঙ্গীকার নিচ্ছি। বাংলার রাজনীতিতে তিনি মীরজাফর। আমি মনে করি উনি মৃত। আগামিকাল সকালে আমি মস্তক মুণ্ডন করব।’’ তবে পরে দল তাঁকে নিরস্ত করে। অতীতের অস্বস্তি যাতে ফিরে না আসে সেই কারণেই বারণ করেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। যদিও সৌমিত্রের বক্তব্য ছিল, ‘‘দলের নির্দেশ নয়, আমার বাবা-মা এখনও জীবিত। সেই অবস্থায় ন্যাড়া হওয়া ঠিক নয় বলে বাবা আপত্তি করেন। তাই ঘোষণা করলেও আমি ন্যাড়া হইনি।’’
ন্যাড়া হওয়ার দ্বিতীয় নায়কও বিজেপির। তাঁর কাহিনি অবশ্য অন্যরকম। তৃণমূল তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরের ঘটনা। ত্রিপুরার বিজেপি বিধায়ক আশিস দাস প্রথমে ঘোষণা করেছিলেন, মা কালীর মন্দিরে পুজো দিয়ে নিজের রাজনৈতিক জীবনের বড় সিদ্ধান্ত নেবেন। তার পরেই তৃণমূলে যোগদানের জল্পনা শুরু হয়। এর পরে ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর কলকাতায় এসে কালীঘাটের মন্দিরে পুজোপাঠ ছাড়া আদিগঙ্গার পাশে বসে নিজের মাথাও মুড়িয়ে ফেলেন আশিস। ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করার পরে তৃণমূলে যোগ দেন।
কিন্তু ছ’মাসেই ‘মোহভঙ্গ’ হয় আশিসের। ২০২২ সালের ২৭ মে তিনি সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল ছাড়েন। সেই সময়ে অবশ্য আশিস আর ন্যাড়া হননি।